আলুর দামে খুশি রাজশাহীর চাষিরা


সুমাইয়া তাবাস্সুম , আপডেট করা হয়েছে : 20-03-2024

আলুর দামে খুশি রাজশাহীর চাষিরা

রাজশাহীতে উঠতে শুরু করেছে নতুন আলু। ভালো দাম পাওয়ায় এবার মাঠেই আলু বিক্রি করছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, এবার মাঠেই বিক্রি করে ১৪-১৫ টাকা লাভবান হচ্ছেন তারা। 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলিত বছর নগরীসহ ৯টি উপজেলায় ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে আলু। এরমধ্যে তানোরে ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে এক হাজার ৬০৮ হেক্টর, মোহনপুরে তিন হাজার ৮২৫ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৮৩০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে এক হাজার ৯৮৫ হেক্টর, পবায় তিন হাজার ৬৩৫ হেক্টর, বাগমারায় ৯ হাজার ৩২০ হেক্টর, চারঘাটে ৩১০ হেক্টর, বাঘায় ২৬৫ হেক্টর, নগরীর মতিহারে ১৬ হেক্টর এবং বোয়ালিয়ায় ৪৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। জেলায় এবার আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন।

এবার রাজশাহীর উৎপাদিত আলু দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলার চাহিদাও মেটানো সম্ভব বলছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

আলু চাষে গত কয়েক বছর ধরেই লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকরা। রাজশাহীর দুর্গাপুরে এবার মাঠেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। এতে কৃষকের খরচ বাদে প্রতিকেজিতে লাভ থাকছে ১৪-১৫ টাকা। তাই মাঠে আলু বিক্রির হিড়িক পড়েছে। গত মৌসুমে এ আলু বিক্রি হয়েছে ১১ থেকে সাড়ে ১১ টাকা কেজি দরে। আর উৎপাদন খরচ হয়েছিল প্রায় ৯ টাকার মতো।

দুর্গাপুরের কলনটিয়া গ্রামের আলুচাষি মামুন ম-ল তাদের এলাকায় প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৬০-৬৫ বস্তা। প্রতি বস্তায় আলু আছে ৭০ কেজি। তার জমি থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে তার কেজিপ্রতি লাভ দাঁড়িয়েছে ১৪-১৫ টাকা।

মামুন ম-ল বলেন, ‘প্রথমে নিজেই আলু হিমাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মাঠেই বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় সব আলু বিক্রি করে দিচ্ছি। প্রতিকেজিতে লাভ আসছে প্রায় ১৪-১৫ টাকা। হিসাব করলে প্রতি বিঘায় ৭০-৭৫ হাজার টাকা লাভ আসছে।’

দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আলুচাষি সুজন মিয়া চড়া দামে আলু বিক্রি করেও হতাশ তিনি। তিনি বলেন ‘আলুচাষ করতে গিয়ে মৌসুমের মাঝপথে সার-কীটনাশাক কিনতে গিয়ে ব্যাপক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই আলুর দাম বেশি হওয়ায় তাড়াহুড়া করে ঋণ পরিশোধ করতে হিমাগারের ঝুঁকি না নিয়ে মাঠে ২৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছি। অথচ সব জায়গায় ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে।

হাটকানপাড়া এলাকার আলুচাষি আব্দুস সালাম বলেন, ‘যতই দাম হোক শেষটা এবার দেখে ছাড়বো। আগেই আলু বিক্রি করবো না। গতবার আগে আলু বিক্রি করে চরম ঠকেছি। আগে আলু বেচে ব্যবসায়ীরা লাভ করলেও আমরা কষ্ট করে কিছুই পাইনি। এবার আর ঠকতে চাই না। তাই পুরো জমির আড়াইশ বস্তা আলু হিমাগারে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

নাটোর জেলার আলু ব্যবসায়ী আবু বকর ছিদ্দিক এবার মৌসুমে পাঁচ হাজার বস্তা আলু কিনবেন। তিনি বলেন, ২০-২১ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে এসেছিলাম। এসে দেখছি হঠাৎ আলুর দাম বেশি। কম দামে কিছুতেই জমিতে থেকে আলু ছাড়তে নারাজ চাষিরা। এদিকে বিভিন্ন স্টোরেজ প্রায় পাঁচ হাজার বস্তা আলুর বুকিং দেওয়া আছে। তাই বাধ্য হয়ে চড়া দাম আলু কিনতে হচ্ছে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, জেলায় এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন। এরইমধ্যে চাষিরা জমিতে আলু তুলতে শুরু করেছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন। তবে এ দাম কয়েকদিনের মধ্যে কমে যাবে এটা নিশ্চিত। কারণ এখনো পুরোদমে আলু ওঠানো শুরু হয়নি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]