ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্ক উঠাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা


রাবি প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 14-03-2024

ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্ক উঠাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। এর মধ্যে রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও বেশ কয়েকটি ইউনিটের ফল ঘোষণা হয়েছে এবং কিছু ইউনিটের পরীক্ষা বাকি রয়েছে।  ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলেও এখনও ফল ঘোষণা করেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যুনতম পাস মার্ক উঠাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। বিগত বছরগুলোর ন্যায় চলতি শিক্ষাবর্ষেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেছেন লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। সীমিত আসন থাকায় যারা পাস করেছেন তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবেন দেশের অন্যতম প্রাচীন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ফলাফলে এমন ভরাডুবিতে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ২০২৩ সনের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সাড়ে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কেই সর্বোচ্চ গ্রেড হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় ন্যুনতম পাস মার্ক পেতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তিনটি ইউনিটে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত পর্যায় শেষে পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৫ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ন্যুনতম পাশ মার্ক ধার্য করা হয় ৪০। কিন্তু ৯৭ হাজার ২৮৭ জন পরীক্ষার্থী এই ৪০ নম্বর উঠাতেই ব্যর্থ হয়েছেন। কোটাবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে আসন রয়েছে ৩৯০৪টি।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, চারুকলা এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট নিয়ে গঠিত 'এ' ইউনিটে পাসের হার সবচেয়ে কম। এই ইউনিটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬৮ হাজার ৬০৭ জন শিক্ষার্থী; যেখানে ৪২ হাজার ১৭ জন ন্যুনতম পাস মার্ক ৪০ পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনটি ইউনিটের মধ্যে এই ইউনিটে গড় পাসের হার সবচেয়ে কম। জানা গেছে, অন্যান্য বছরের মতোই ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি অংশে ভালো নম্বর তুলতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে। বিশ্ববিদ্যালয়টির দুটি ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৬৬ হাজার পরীক্ষার্থী ন্যুনতম পাস মার্ক উঠাতে পারেনি। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৭ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছেন ৪০ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী। শতকরা হিসেবে অকৃতকার্যের হার দাঁড়ায় ৭১.৩ শতাংশ!

ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এমন ভরাডুবির কারণ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক গৌতম রায়।

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এমন ভরাডুবির পেছনে শিক্ষার্থীদের পঠিত বিষয়ে পর্যাপ্ত জানাশোনার অভাব রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে গৌতম রায় জানান, "আমি মনে করি, এমন ভরাডুবির জন্য শিক্ষার্থীদের পঠিত বিষয়ে জানাশোনার অভাব বেশ খানিকটা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন আসে, সেগুলো মূলত পূর্ববর্তী স্তরের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়। শিক্ষার্থীদের যদি তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে, তাহলে অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর করতে পারার কথা। আমাদের শিক্ষার প্রতিটি পর্যায়েই গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষায় এখনও মূলত পাঠ্যবইয়ের কিছু বিষয়বস্তু শিখে সেটা পরীক্ষায় উগরে দেওয়াটাই মূল কাজ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ফলে, পাঠ্যবইয়ের বাইরে অনেক সাধারণ প্রশ্নের উত্তরও শিক্ষার্থীরা দিতে পারছে না। যদি পাঠ্যবইকে ভিত্তি ধরে শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সমাধানের কৌশল শেখানো হতো কিংবা শিক্ষার্থীদের নিজ থেকে শেখার প্রবণতা বাড়ানো যেতো, তাহলে শুধু ভর্তি পরীক্ষাই নয়; সামগ্রিকভাবেই শিক্ষার মান বাড়তো।"

ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ভালো ফলাফল করতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে রাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটটের এই শিক্ষক বলেন, "আমাদের ইংরেজির অবস্থা সার্বিকভাবেই বেশ খারাপ। বারো বছর একটানা বিষয় হিসেবে ইংরেজি পড়ার পরও ইংরেজিতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের যোগাযোগ দক্ষতাও গড়ে ওঠে না শিক্ষার্থীদের। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে, ইংরেজিকে ভাষাগত একটি স্কিল বা দক্ষতা হিসেবে না দেখে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজিকে একটি আলাদা বিষয় হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের ইংরেজির বাইরে ইংরেজিতে কথা বলা, নিয়মিত ইংরেজি শোনা বা ইংরেজি চর্চার পরিবেশ নেই। অর্থাৎ, একটি ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে ব্যবহার করার পরিবেশের অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। এর প্রভাব ভর্তি পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে যদি ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ওপর যদি জোর দেওয়া যেতো, তাহলে হয়তো শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে আরেকটু ভালো ফলাফল করতো।"

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অপর্যাপ্ত অবকাঠামোগত ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে গৌতম রায় জানান, "স্বল্প সম্পদের মধ্যে একজন শিক্ষককে যেখানে প্রচুর শিক্ষার্থীকে পড়াতে হচ্ছে, সেখানে এর চেয়ে বাড়তি কিছু আপাতত আশা করা যায় না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং কার্যকর শিখন পদ্ধতি নিশ্চিত না করলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হওয়াটা কঠিন।" 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]