রাজশাহীতে গত চার বছরে সূর্যমুখি ফুলের চাষ কমেছে হতাশাজনক হারে। চলতি বছর পুরো জেলায় সূর্যমুখির চাষ হয়েছে ২২ হেক্টর জমিতে। আর ২০২১ সালে জেলায় এই ফুলের চাষ হয়েছিল ১৫৪ হেক্টর জমিতে।
সূর্যমুখি এমন অবস্থায় কৃষি অফিস বলছে, লাভজনক না হওয়ায় কমেছে এই ফুলের চাষ। চাষীরা অন্য ফসলে ঝুঁকেছে। একই সাথে প্রণোদনাও ফ্যাক্টর ছিল। কারণ প্রণোদনার বছর সর্বোচ্চ সূর্যমুখির চাষ হয়। তার পরের বছরগুলোতে কমতে কমতে তলানিতে ঠেকে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয় সূর্যমুখি চাষে। সে বছর ব্যাপক হারে রাজশাহীতে সূর্যমুখির চাষ হয়। জেলার সর্বোচ্চ ১৫৪ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। এতে ফলন হয় ২০৪ মেট্রিক টন। পরের বছর সূর্যমুখির চাষ কমে দাঁড়ায় ৩৯ হেক্টরে। এক বছরের মাথায় ২০২২ সালে এক লাফে সূর্যমুখির চাষ কমে ১২০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ফলন হয় ৪৫ মেট্রিকটন।
এছাড়া ২০২৩ সালে জেলায় সূর্যমুখির চাষ হয় ২৯ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালের তুলনায় চাষের জমি কমেছে ১০ হেক্টর। ফলন হয় ৩৮ দশমিক ৮ মেট্রিকটন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জেলায় সূর্যমুখির চাষ হয় ২২ হেক্টর জমিতে। এবছর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৫ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। এছাড়া পবা, তানোর ও মোহনপুর উপজেলায় তিন হেক্টর করে জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছে। বাগমারা, দুর্গাপুর ১ হেক্টর করে হলেও পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ২ হেক্টর করে জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রণোদনার বছর ২০২১ সালে জেলায় ১৫৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়। সে বছর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৬০ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। কৃষি অফিস ফলন দেখায় ৮৪ মেট্রিক টন। এবছর পবা উপজেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখি উৎপাদন হয় ৩১ দশমিক ২ মেট্রিক টন। তানোরে ১৪ হেক্টর জমিতে ১৮ দশমিক ২ মেট্রিক টন, মোহনপুরে ৫ হেক্টর জমিতে ৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ২ হেক্টর জমিতে ২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন, পুঠিয়ায় ৩ হেক্টর জমিতে ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন, গোদাগাড়ীতে ৩০ হেক্টর জমিতে ৩৯ মেট্রিক টন, চারঘাটে ৬ হেক্টর জমিতে ৭ দশমিক ২ মেট্রিক টন, বাঘায় ১০ হেক্টর জমিতে ১২ মেট্রিক টন সূর্যমুখির চাষ হয়।
অপরদিকে, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রাজশাহী জেলায় সূর্যমুখি চাষের গড় হিসেবে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় বেশি। এই উপজেলায় ২০২২ সালে সূর্যমুখির চাষ হয় ৯ হেক্টর জমিতে। যা ২০২১ সালের তুলনায় ২১ হেক্টর জমিতে। তার পরের বছর ২০২৩ সালে এই ফুলের চাষ হয় ৭ হেক্টর ও সর্বশেষ চলতি বছরে চাষ হয়েছে ৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বাঘায় উপজেলায় এবছর মাত্র দুই হেক্টর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়েছে। প্রণোদনার বছরে এই উপজেলায় সূর্যমুখি ফুলের চাষ হয়েছিল ১০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৩ হেক্টর ও ২০২৩ সালে বেড়ে ৮ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। এবিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, সূর্যমুখির চাষ কমেছে উপজেলায়। এবছর উপজেলায় চাষ হয়েছে ২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এই ফুলের চাষ কমেছে। এছাড়া লাভজনক কম হওয়ায় কমেছে এই ফুলের চাষ। চাষীরা অন্য ফসলে ঝুঁকেছে।
এছাড়া দুর্গাপুরে প্রণোদনার বছরে এই উপজেলায় সূর্যমুখির চাষ হয়েছিল ২ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে ৫ হেক্টর ও ২০২৩ সালে ১ হেক্টর ও সর্বশেষ চলতি বছরে ১ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। গত বছর সূর্যমুখি ফুলের চাষ করলেও এবছর চাষ করেননি উপজেলার কৃষক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখির চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফলন কম হওয়ায় এবছর চাষ করেনি। তার দাবি আশানুরূপ ফলন পাননি সূর্যমুখির। তিনি শুধু নয়, এলাকার অনেকেই চাষ করেনি সূর্যমুখির।
গোদাগাড়ীর এক চাষি বলেন, এবারই প্রথম তিনি এই ফসলের চাষ করছেন। তিনি আশাবাদী এই ফসল নিয়ে। তার জমিতে মোটামুটি ফুটেছে সূর্যমুখি ফুল। তিনি আশা করছেন ফলন ভালো পাবেন।
অপরদিকে, সর্বোচ্চ চাষের উপজেলা বাগমারায় সূর্যমুখি ঠেকেছে হেক্টরে। এই উপজেলায় মাত্র ১ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছে। যদিও প্রণোদনার বছরে উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে কমে ৫ হেক্টর ও ২০২৩-২০২৪ সালে চাষ হয়েছে ১ হেক্টরে দাঁড়ায়।
এই উপজেলার কৃষি অফিসার আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোঠোনে কল করা হলে তিনি এই মুহূর্তে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি অফিস সময়ে যোগাযোগরে পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, সূর্যমুখির চাষ কমেছে। ২০২১ সালে প্রণেলাদনা ছিল। সেই বছর বেশি এই ফুলের চাষ হয়েছিল। এর থেকে যে ফসলগুলো লাভজনক সেই ফসলে ঝুঁকেছে চাষীরা।