৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 06-03-2024

৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতে তুলে দেন। সেই মর্মস্পর্শী বজ্রনিনাদ ৭ কোটি বাঙালির হৃদয়কে বিদ্যুৎ গতিতে আবিষ্ট করেছিল। আগামীকাল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে বুধবার (৬ মার্চ) দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির কালজয়ী মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন। ক্ষমতাকে কি করে নিয়ন্ত্রিতভাবে সকলের কল্যাণে ব্যবহার করতে হয় তাও বুঝিয়ে  দেন। শিখিয়ে দেন আত্মরক্ষামূলক কিংবা প্রতিরোধক সমরনীতি, যুদ্ধকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে শহিদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে একটি মহাকাব্য রচনা করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ একই সুত্রে গাঁথা। পূর্ব বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং পৃথিবীর মানচিত্রে তাদের জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন এবং সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একমাত্র তিনিই ছিলেন হাজার বছরের শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ না করে নানা টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি আমাদের ‘স্বাধীনতা' নামের এক অমরবাণী শুনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। তিনি বীর বাঙালির অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উৎকীর্ণ করেন তার ভাষণের শেষ দু'টি শব্দে- ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে।

একটি ব্রিটিশ পত্রিকা বঙ্গবন্ধু ভবনকে লন্ডনের ১০-ডাউনিং স্ট্রিটের সঙ্গে তুলনা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুনে ঢাকায় রাষ্ট্রপতির বাসভবনে বাঙালি বাবুর্চি ইয়াহিয়া খানের জন্য রান্না বন্ধ করে দিয়েছিল। ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মানুষ ইয়াহিয়ার শাসনকে অগ্রাহ্য করে শেখ মুজিবের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। সেই রাতে পাকিস্তানি শাসক তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলার দামাল ছেলেরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে নয় মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বাংলার মাটিতে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন এবং তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেন। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুদের এ দেশীয় দোসররা পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। তারা ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে এবং ‘জয় বাংলা’ শ্লোাগানও নিষিদ্ধ করে। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু মুজিবের নাম মুছে দিতে উদ্যত হয়।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর খুনি মোস্তাক-জিয়ার আনীত দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে এবং জাতির পিতার খুনিদের বিচার শুরু করে। পরবর্তীতে আমরা ২০০৯ সাল থেকে পরপর চার দফা সরকার গঠন করে জাতির পিতার আদর্শে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করি। জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করি। ফলে, জাতি গ্লানিমুক্ত হয়। আমরা সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ প্রণয়ন করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করি। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। শুধু তাই নয়, ইউনেস্কো মনে করে এ ভাষণটির মাধ্যমে জাতির পিতাই প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ-এর বিশ্বস্বীকৃতি আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গৌরবের স্মারক। আমাদের হাইকোর্টের রায়ের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২০৪১ সালে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা হবে। তিনি বিশ্বাস করেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ মার্চের ভাষণ যুগে-যুগে বাঙালিদের বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে চলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]