পুলিশের মারে মৃত্যু হয়েছিল কুর্দ তরুণী মাহসা আমিনির। ‘ঠিক মতো’ হিজাব না পরাই ছিল তাঁর অপরাধ! ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। দিকে দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল। যা নাড়িয়ে দিয়েছিল সেদেশের ‘মোল্লাতন্ত্র’কে। তীব্রতা কিছুটা কমলেও দেশজুড়ে এখনও চলছে হিজাব বিরোধী আন্দোলন। কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই তেহরানের। হিজাব পরা নিয়ে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এই আবহেই ইরানে অনুষ্ঠিত হল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
এএনআই সূত্রে খবর, শুক্রবার ভোট দিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। ভোটদান শেষে সকলের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিয়ে খামেনেই বলেন, “সমস্ত দিক থেকে সকলের নজর রয়েছে আমাদের দেশ ও দেশের বিভিন্ন সমস্যাগুলোর ওপর। আমাদের প্রিয় জনতার জেনে রাখা দরকার গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা নজর রেখেছেন আজকে ইরানের উপর। তাঁরা দেখতে চান আপনারা কাদের নির্বাচিত করেছেন। এবং আগামিদিনে এর ফলাফল কী হবে।”
চার বছরের মেয়াদ শেষে এদিন ২৯০ সদস্যের ‘মজলিশ’ বা পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের বেছে নিতে ভোট দেয় মানুষ। ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন ১৫ হাজার প্রার্থী। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের সভার ৮৮টি আসনের জন্য প্রার্থী ইসলামিক ধর্মগুরুদের ভাগ্যপরীক্ষাও হয় এদিন। আগামীকাল শনিবার ফল ঘোষণার কথা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই বিশেষজ্ঞদের সভাই দেশে সুপ্রিম লিডার বেছে নেয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরেই পুনরাবৃত্তি ঘটে মাহসা কাণ্ডের। হিজাব না পরায় নীতি পুলিশের মারে প্রাণ হারায় আরমিতা জেরাভান্দ নামে এক কিশোরী। যাকে কেন্দ্র করে ইরানের নিন্দায় সরব হয় আন্তর্জাতিক মহল। ওই ঘটনায় আরও একবার প্রমাণ হয়ে যায় হাজার হাজার প্রতিবাদ, বিক্ষোভেও বিশেষ পালটায়নি তেহরানে পরিস্থিতি। শনিবার ফলাফল ঘোষণা হবে এই নির্বাচনের। এর পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কতটা সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারেন সেদিকেই নজর থাকবে সকলের। মাহসা কিংবা আরমিতা। ফের যেন কারও পরিণতি তাঁদের মতো না হয় সেটাই এখন চাইছেন সকলে।
বলে রাখা ভালো, ২০২২-এর ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানে নীতি পুলিশের মারে মৃত্যু হয় ২২ বছরের কুর্দ তরুণী মাহসা আমিনির। তার পর থেকেই হিজাবের শিকল ভেঙে ফেলতে বেনজির গণউত্থানের সাক্ষী থেকেছে ইসলামিক দেশটি। তার পর এই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ইরানে। ফলে এই ভোটপ্রক্রিয়ার উপর নজর রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের।