রাজশাহীর পুঠিয়ায় তিন ফসলি কৃষিজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকার কৃষকেরা।
গতকাল (২০ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নান্দিপাড়ার ফসলি মাঠে এলাকার দুই শতাধিক কৃষকের অংশগ্রহণে ওই মানববন্ধন হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, মোটা অঙ্কের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী মৎস্যচাষি এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রথমে ফসলি জমি নিচ্ছেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সেই জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। প্রভাবশালী মহলটি সেখানে খনন করা পুকুরগুলো মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়ে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কৃষক নব কুমার সাহা বলেন, এই বিলে প্রায় ৩০০ একর ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমিতে চাষাবাদ করে হাজারো কৃষকের সংসার চলে। কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী মৎস্যচাষি বিগত কয়েক বছরে বিলের বেশির ভাগ জমিতে পুকুর খনন করেছে। ফলে এখন বছরের বেশির ভাগ সময় এসব বিলে জলাবদ্ধতা থাকে। তাতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে এবার আবারও প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। যে কারণে চাষিরা ফসলি জমি রক্ষায় বিলে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে এই এলাকার ফসলি জমি রক্ষায় জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
আশুতোষ সাহা জানান, পুকুর খনন করতে গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নান্দিপাড়া মাঠে সোহেল মোল্লা ও বিজন কুমার সাহা জোরপূর্বক আমাদের কয়েকজন
কৃষকের সরিষা ক্ষেতের উপর দিয়ে পুকুরে ভেকু নিয়ে আসে। এতে প্রায় ১০ বিঘা জমির ৬০ হাজার টাকার ফসল নষ্ট হয়।
আলীমুদ্দিন শেখ বলেন, প্রভাবশালী সোহেল মোল্লা ও বিজন কুমার সাহা এলাকার কৃষকদের নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি এই পুকুর খনন বন্ধের জন্য আমরা কোনরুপ চেষ্টা করলে বা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দিলে আমাদের নানারকম ভয়ভীতিসহ প্রাননাশের হুমকি দেন।
কৃষক আমির শেখ বলেন, পুকুর খননকারীরা প্রভাবশালী। তারা এলাকার রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ফসলি ক্ষেত খনন করছে। তিনি শিগগির তা বন্ধের দাবি জানান। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- জাহেরুল মোল্লা, মফিজ উদ্দিন, জিল্লুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
পুকুর খননে জমি লিজ প্রদানকারী একজন কৃষক বলেন, বিলের জমিতে বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকে। এ কারণে ফসলও তেমন ভালো হয় না। কিন্তু ওই জমিতে পুকুর খনন করলে মাছচাষিরা প্রতি বিঘা জমি বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লিজে দিচ্ছে। যে কারণে তাঁর মতো অনেকেই ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে দিচ্ছেন।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, এলাকার ফসলি জমি রক্ষায় বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে খননকাজ বন্ধ হচ্ছে না।
তবে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, পুকুর খনন বন্ধ করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি দেখবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, পুঠিয়ায় কৃষিজমিতে পুকুর খননের জন্য কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ পুকুর খনন করে ফসলি জমি বিনষ্ট ও রাস্তাঘাটের ক্ষতিসাধন করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।