দুই শিশু মৃত্যুকে ঘিরে ভাইরাস আতঙ্ক, আইইডিসিআরের টিম আসছে রাজশাহীতে


মঈন উদ্দিন , আপডেট করা হয়েছে : 19-02-2024

দুই শিশু মৃত্যুকে ঘিরে ভাইরাস আতঙ্ক, আইইডিসিআরের টিম আসছে রাজশাহীতে

দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ও পরবর্তীতে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না হওয়ায় অজানা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। এদিকে, মারা যাওয়া শিশু ও আইসোলেশনে থাকা বাবা-মায়ের নিপাহ ভাইরাস, করোনা ও ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ আসায় অজানা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরাও। 

জ্বর, বমির পর সারা শরীর ভরে গিয়েছিল ছোপ ছোপ কালো দাগ। এমন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে দুই বোন। চিকিৎসা দূরের কথা, রোগ শনাক্তের সময়ও পাননি চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন তারা। মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজশাহী আসছে।

জানা যায়, হঠাৎ জ্বর আর বমির লক্ষণ নিয়ে দুই বছরের শিশু মুনতাহা মারিশা ও তার বোন চার বছরের মুফতাউল মাশিয়া কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যায়। তাদের বাবা রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনও এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকেন।

মারা যাওয়া দুই শিশুর হঠাৎ জ্বর আর বমির লক্ষণ প্রকাশ পায়। মৃত্যুর আগে ও পরে দুই শিশুরই শরীরে ছোপ ছোপ কালো র‌্যাশ দেখা দিয়েছিল। আর আইসোলেশনে থাকা শিশুদের বাবা-মায়ের এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

শিশুদের মা পলি খাতুন জানায়, মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া (গৃহকর্মী) কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ হতে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিলো মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। পরদিন বুধবার সকাল ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশা জ্বরে আক্রান্ত হয়। বারবার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে নেন। পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও একই লক্ষণ দেখা দেয়। ফলে দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেয়া হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে র‌্যাশ দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা নিপাহ ভাইরাস আর মিশেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার আশঙ্কা করেছিলাম। পরীক্ষায় এ দুটো রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, কুড়িয়ে আনা বরই না ধোয়া অবস্থায় খেয়েই অজানা কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল শিশু দুটি। এভাবে জ্বর, বমির পর র‌্যাশ উঠে দ্রুতই রোগী মারা যাওয়া আগে কোনো রোগের ক্ষেত্রে আমি দেখিনি।

ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এটা কী ভাইরাস তা চাইলে সরকার বের করতে পারবে। এ জন্য মাশিয়া মারা যাওয়ার আগেই তার পাকস্থলী হতে কিছু খাবার বের করে সংরক্ষণ করেছি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট চাইলে এটা আমরা দিতে পারব। পরীক্ষা করলে কিছু জানা যেতেও পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালক-অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘শিশু ২টির নিপাহ ভাইরাস রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তারা কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো তা এখনই বলা যাবেনা। এ জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১টি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম রাজশাহীতে পাঠানো হচ্ছে।’

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, নিপাহ ভাইরাস রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দলটি দ্রুতই রাজশাহী পৌঁছাবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ বলেন, ‘পরীক্ষায় যখন কিছু পাওয়া গেল না, তখন আমিই স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) কাছে অনুরোধ করলাম যেন একটা বিশেষজ্ঞ দলকে রাজশাহী পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচজনের এই বিশেষজ্ঞ দলটি সোমবার হয়তো রাজশাহী এসে পৌঁছাবেন। তারা হাসপাতালে আসবেন। পাশাপাশি এলাকায় যাবেন। লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন। পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করবেন। বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করবেন।

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, আমরা আগে থেকেই নিপার সংক্রমণ রোধে কাঁচা খেজুর খাওয়া রোধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিলাম। কাঁচা খেজুর রস খাওয়া বন্ধ করেছি। আর ওই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিপা ধারণা করা হচ্ছিলো, সেটা নেগেটিভ এসেছে। এটা নিয়ে আইইডিসিআর কাজ করছে। তবে খেজুর রস না খাওয়া ও ফল ভালেভাবে পরিষ্কার খাওয়ার বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা হচ্ছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]