ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩-২৪ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবসায়িক, উদ্যোক্তা ও সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অর্জনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে অবদান রাখায় এই স্বীকৃতি দেয়া হয় তাদের। অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি খাত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
‘সায়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি অ্যাওয়ার্ড,’ ‘সোশ্যাল অ্যাকশন অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ – এ তিনটি বিভাগে বিজয়ী নির্বাচন করেন এ অ্যাওয়ার্ডের বিচারক প্যানেল।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও সেখানে শিক্ষাপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাপী প্রাক্তন সকল শিক্ষার্থীদের অর্জন উদযাপন করে আয়োজিত হয় সম্মানজনক এ আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড। দশম বছরে পা দেয়া এবারের সংস্করণে প্রায় ১শ’টি দেশের ইউকে অ্যালামনাই এবং যুক্তরাজ্যের ১৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১,৪৫০ জনের বেশি আবেদনকারীর মধ্য থেকে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এবং এই স্বপ্ন পূরণে আমাদের প্রয়োজন ‘স্মার্ট সিটিজেন’। স্মার্ট সিটিজেন গড়তে সবার জন্য সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো উদ্ভাবন বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। সকলের জন্য উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করার এই প্রয়াসে আমাদেরকে নিরলস সহায়তা করার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল ও যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।”
ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার এবং ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ম্যাট ক্যানেল বলেন, ‘এ বছরের পুরস্কারের জন্য মনোনীত এবং সংক্ষিপ্ত তালিকায় যারা স্থান করে নিয়েছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন। স্টাডিইউকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অর্জন উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চমৎকার অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং এ অংশীদারিত্ব আমাদের ডায়াস্পরা, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই তৈরি। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন বিশ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন এবং তারাই এ দৃঢ় সম্পর্ক এবং যুক্তরাজ্যের ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সংযোগের প্রমাণ।”
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর বাংলাদেশ টম মিশসা বলেন, ‘আজ আমরা সেই অসাধারণ ব্যক্তিদের সাফল্য উদযাপন করছি যারা যুক্তরাজ্যের শিক্ষা থেকে অর্জিত দক্ষতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাদের চারপাশের বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই বছরের অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় দক্ষতা ও তাদের প্রচেষ্টার সাক্ষ্যই নয়, পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যের শিক্ষার পরিবর্তনীয় প্রভাবেরও প্রমাণ। আরও সমৃদ্ধ এবং টেকসই বিশ্ব গঠনে সচেষ্ট সকল ফাইনালিস্ট এবং বিজয়ীদের শুভকামনা।”
বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড বিভাগ থেকে ফাইনালিস্ট হয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের প্রফেসর খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন, অক্সফোর্ড ব্রুকস ইউনিভার্সিটির মোহসিনা খানম এবং কিংস্টন ইউনিভার্সিটি ও কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির তানভীর আহমেদ।
সায়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি অ্যাওয়ার্ড বিভাগ থেকে ফাইনালিস্ট হয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব, ক্যান্সার গবষেক ও সহকারী অধ্যাপক, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কিংস কলেজ লন্ডনের ডা. কামরুন কলি এবং ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের আলিফা বিনতে হক।
সোশ্যাল অ্যাকশন অ্যাওয়ার্ড বিভাগ থেকে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের মোহাম্মদ তাকি ইয়াসির, ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের সায়াদা সামারা মোরতাদা এবং ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের তানজিলা মজুমদার দৃষ্টি।
বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইউনিভার্সিট অব সাউদাম্পটন থেকে স্নাতকপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোন্দকার এ. মামুন। অধ্যাপক মামুন একজন বিশিষ্ট এআই গবেষক এবং ইউআইইউ-তে এইমস ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামে ২শ’ টিরও বেশি নিবন্ধ এবং অসংখ্য পেটেন্ট রয়েছে।
সায়েন্স অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি অ্যাওয়ার্ডের বিজয়ী হয়েছেন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং কিংস কলেজ লন্ডন থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ডা. কামরুন কলি। তিনি একজন সহযোগী বিজ্ঞানী ও মানসিক স্বাস্থ্য গবেষক। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান – আইসিডিডিআর,বি -তে কর্মরত আছেন। জাতিসংঘের ইনস্পায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার, বাংলাদেশ এবং নারীদের জন্য মুজিব-১০০ বছর গবেষণা অনুদানসহ একাধিক গবেষণা ও সামাজিক পুরস্কারে স্বীকৃত হয়েছেন ডা. কামরুন নাহার কলি।
সোশ্যাল অ্যাকশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতকপ্রাপ্ত মোহাম্মদ তাকি ইয়াসিরকে। তিনি একাধারে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত, একজন আইনজীবী, প্রভাষক, উদ্যোক্তা এবং টেকসই কমিউনিটি-কেন্দ্রিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘ফুটস্টেপস’ -এর প্রতিষ্ঠাতা। সামাজিক প্রভাব বিভাগে ২০২২ সালে ফোর্বস ৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এশিয়াসহ একাধিক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি অর্জন করেছেন তিনি।