গুজিশহর মেলায় যাত্রা-সার্কাসে অশ্লীল নৃত্য


আলিফ হোসেন, তানোর প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 07-02-2024

গুজিশহর মেলায় যাত্রা-সার্কাসে অশ্লীল নৃত্য

রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নিয়ামতপুরের বাহাদুরপুর ইউনিয়নের (ইউপি) গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয় ও মন্দিরের কথিত উন্নয়নের নামে শুরু হয়েছে প্রেম গোসাই মেলা-২০২৪। প্রতি বছর মেলা থেকে কোটি কোটি টাকা আয় হয়।কিন্ত্ত৷ মন্দির ও স্কুলের কি উন্নয়ন হয় সেটা কেউ জানেন না। অথচ মেলার আয় থেকে উন্নয়ন করা হলে এই মন্দির-স্কুল দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠতো। স্থানীয়রা জানান, মন্দির-স্কুল উন্নয়নের নামে আয়োজকদের পকেট ভারীর মেলা।

জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই প্রেম গোসাই মেলা। এদিকে এসএসসি পরীক্ষার পুর্ব মুহুর্তে এই মেলা আয়োজন করায়, হাজারো শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে। এতে এলাকার অভিভাবক মহল ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। মেলায় প্রতিদিন দুপুর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজানোর কারণে বিপাকে পড়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি এবং ১০ বছরের  শিশু থেকে ৫০ বছরের বয়োজ্যেষ্ঠরা যাত্রা-সার্কাসের নামে অর্ধনগ্ন নারীর অশ্লীল নৃত্য উপভোগ করছে। 

স্থানীয়রা জানান, এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক(ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও নিয়ামতপুর থানা পুলিশকে বার বার অভিযোগ করা হলেও বন্ধ হয়নি মেলায় অশ্লীল কার্যকলাপ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলা কমিটির এক সদস্য জানান, তারা মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সুপারিশে ১৫ দিনের ধর্মীয় মেলা করার অনুমতি নিয়েছেন। এ মেলা চলবে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েকবছর থেকে নিয়ামতপুর উপজেলার গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মেলা বসলেও এবার এই মেলা সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে বসেছে। সেখানে সার্কাস পেন্ডেলে প্রদর্শিত হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য। আর যাত্রাপালায় চলছে দর্শকদের মনোরঞ্জনে টাকার ফুলঝুরিতে মেয়েদের শরীর প্রদর্শন। রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত শুধুই অশ্লীলতা ও বিকৃত যৌন আবেদনে ভরা উলঙ্গ নৃত্য এবং অরুচিকর গানের আগ্রাসন। উঠতি বয়সের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও গ্রাম্য যুবকসহ দূর-দূরান্তের বিকৃত মানসিকতার মানুষের উপচেপড়া ভিড়। তাদের আড্ডায় জমে উঠছে মেলা প্রাঙ্গন। ভাবার বিষয় হচ্ছে, অশ্লীল নৃত্য চলাকালিন যাত্রা প্যান্ডেলে সংশ্লিষ্ট থানার একাধিক পুলিশ সদস্যকে পোষাক পরিহিত অবস্থায় নারীদেহের অশ্লীল নগ্ন নৃত্য উপভোগ করতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, সামনে এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে মেলা কোনো মতেই করা ঠিক হয়নি। মেলার মাইক ও সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়াও সন্ধ্যা হলে ছেলেরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে মেলায় চলে যায়। চোখের সামনে এমন অশ্লীলতার মেলা চললে নিজেদের আত্মসম্মান বোধ আর থাকে না। নৃত্যের সময় নর্তকীদের সঙ্গে আবার অনেকেই অশ্লীলতায় অংশ নিয়ে আরো অনেক বেশি টাকা ব্যয় করছে।

তারা বলেন, মেলার আয়োজক কমিটি টাকা রোজগারের জন্য পরীক্ষার মধ্যেই মেলা চালু করেছে, যা নিন্দনীয়। দ্রুত এই নোংরা মেলায় এমন অশ্লীলতা বন্ধে তারা জেলা প্রশাসক ও ডিআইজি রাজশাহী রেঞ্জ বরাবর আবেদন জানিয়েছেন।

এদিকে মেলা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন চন্দ্র সাহা ও  সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র প্রামানিক বলেন, ‘গ্রামীণ সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য মেলায় প্রতিবছর যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। এ বছর আমাদের মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের কথামতো মেলা পরিচালনা করছি। তিনি ১৫ দিনের মেলার পারমিশন নিয়ে দিয়েছেন। তিনিই আমাদের মেলার সকল বিষয় দেখছেন। অনেকেই যাত্রাপালায় অশ্লীল নৃত্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। তবে আমাদের পুরো মেলা জুড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। মেলায় কোন আর অশ্লীল নৃত্য হচ্ছে না বলে জানান তারা।

এদিকে এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠন “জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা” রাজশাহী বিভাগের সভাপতি  নুরে ইসলাম মিলন নওগাঁ নিয়ামতপুরের শত বছরের পুরনো প্রেম গোসাই মেলায় এমন উচ্চস্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নোংরা ও অশ্লীল নৃত্য বন্ধে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি রাজশাহী বরাবর অভিযোগ করেছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী নুরে ইসলাম মিলন বলেন, মেলা শুরুর দিন থেকে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও নিয়ামতপুর থানাকে এমন উচ্চস্বরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নোংরা ও অশ্লীল নৃত্য বন্ধে বলা হলেও তা হয়নি। বরং নিয়ামতপুর থানার পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যদের মেলায় যাত্রার নামে চলা এমন নারীদেহের অশ্লীল অর্ধনগ্ন নৃত্য উপভোগ করতে দেখা যায়। এবিষয়ে

নওগাঁ জেলা প্রশাসক (ডিসি) গোলাম মওলা বলেন, আমাদের কাছে মেলা করার অনুমতির একটি আবেদন জমা দিলে তার পেক্ষিতে আমরা ধর্মীয় মেলার জন্য আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত অনুমতি প্রদান করেছি মেলায় যাত্রা বা সার্কাসের নামে নোংরা কিছু প্রদর্শন হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো বলে জানান তিনি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]