রাজশাহীতে আগাম জাতের আলুতে লাভবান চাষি


মঈন উদ্দিন: , আপডেট করা হয়েছে : 06-02-2024

রাজশাহীতে আগাম জাতের আলুতে লাভবান চাষি

রাজশাহীতে দিন দিন আলু চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। অধিক লাভের আশায় এখন আগাম জাতের আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। বাজারে আগাম জাতের আলুর ভালো দাম পেয়ে খুশি বলে জানিয়েছেন আলুচাষিরা। তবে চলতি মৌসুমে তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশার পাশাপাশি আলুবীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, মজুরি, সেচ সবকিছু মিলিয়ে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে আলুচাষিদের। তা সত্ত্বেও এবার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কৃষকরা এখন শীতের কুয়াশা উপক্ষো করে সকালে শিশির ভেজা মাঠে আগাম জাতের আলু তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগাম জাতের আলু চাষ করে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান সদর উপজেলার হাজরাপুর গ্রামের আলুচাষি বিকাশ। 

জেলার তানোর উপজেলার চাঁনপুর এলাকায় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদনের খরচ বাদ দিয়ে এক বিঘা জমিতে কৃষকের লাভ হয়েছে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে এই অঞ্চলের কৃষকরা ৫২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। এখন প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রথম দিকে আগাম আলুর দাম ভালো পেয়েছেন। কিন্তু বাজারে বেশি আলু আমদানি হলে কমে আসবে।

এই অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় দুই ধরনের জমিতে আলু চাষ হয়ে থাকে। আগাম জাতের আলু আমন ধান কাটার পর ব্যাপক হারে চাষ হয় এঁটেল ও দো-আঁশ মাটির জমিতে। গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের আলু বীজ রোপন মৌসুম শুরু হয়। ৬৫-৭০ দিনে আগাম জাতের এ আলুর ফলন হয় ৪৫-৫০ মণ প্রতিবিঘা জমিতে। তারপর জমি থেকে আলু তুলে হাটে ও বাজারে বিক্রি শুরু হয় আগাম আলু। আমন ধান কেটে নামলা জাতের (পরে লাগানো) আলুর উৎপাদন বিঘা প্রতি ৮০ মণ থেকে ৯০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। দাম ভালো পাওয়ায় আগাম জাতের আলুতে কৃষককে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছে চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছরের তুলনায় এই বছর আলুর চাষের জমি কমেছে ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। তবে উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়েছে তানোর উপজেলায়। রাজশাহী অঞ্চলের আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন, এমন একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ আলু বীজ রোপন করা হয়। আলুর জমি পরিচর্যা

শেষে ৬০-৭০ দিন পর আলু তুলে বিক্রি শুরু হয়। নতুন এ আলুর চাহিদাও বেশ ভালো। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে আলু উৎপাদনের খরচ বেড়েছে অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না তাদের।

তানোর উপজেলার চাঁনপুর এলাকার কৃষক মামুন আর রশিদ জানান, এবছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছেন ৫০ মণ আলু। শুরুতে ৫২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে বিঘা প্রতি লাভ হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। তবে ফলন একটু কম। তারপরও ভালো লাভ হয়েছে। দিন দিন বাজারে আমদানি বাড়ছে। তাই দাম কমতে শুরু করেছে।

একই এলাকার কৃষক আক্কাস আলী জানান, তার নিজের ১০ বিঘা জমিতে ডায়মন্ড জাতের আগাম আলুর বীজ চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৬৫ মণ আলু। তিনি বর্তমান বাজারে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন। ফলে তার বিঘা প্রতি লাভ পাচ্ছেন ২০-২৫ হাজার টাকা।

বাজারে আলুর জাত ও ছোট বড় আলু হিসেবে খুচরা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার শফিকুল ইসলাম হড়গ্রাম কাঁচাবাজারে এসেছেন সবজি কিনতে। তিনি জানালেন, কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন এটা ঠিক। কিন্তু আমরা বাজারে এসে দাম নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোজদার হোসেন জানান, জেলার বাগমারা ও তানোর উপজেলার কৃষকরা আগাম আলুর চাষ বেশি করে থাকেন। প্রচ- শীত ও ঘনকুয়াশার কারণে আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু আগাম আলু চাষ করে কৃষক দামও ভালো পাচ্ছেন। এবার আশা করা যাচ্ছে- আলুতে লোকসান হবে না। এই বছর আলুর লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ হাজার হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ২৬ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬১৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ২২৩ মেট্রিক টন। তবে উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়েছে তানোরে উপজেলায়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]