নাটোরের সিংড়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ ফরহাদ হোসেন মন্ডলকে (৪০) গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩ ।
শনিবার (২০ জানুয়ারী) সোয়া ৮টায় গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ ফরহাদ মন্ডল, সে নাটোরের সিংড়া থানার মুন্সি বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মোঃ হামিদ আলীর ছেলে।
রোববার (২১ জানুয়ারী) র্যাব-৩, এর পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ফরহাদ জানায়, ভিকটিম মোছাঃ ফাতেমা বেগমকে ২০০১ সালে ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক বিবাহ করে। বিবাহের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ১৫ হাজার টাকা শ্বশুরের নিকট হতে গ্রহন করে। পরবর্তীতে তাদের পরিবারে দুইটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে আরও যৌতুকের টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয়। স্বামীর কথায় গৃহবধূ ফাতেমা তার বাবা-মাকে যৌতুকের বিষয়টি জানায়। কিন্তু তার বাবার পরিবারেও অভাব অনটনে থাকায় তার বাবা আর যৌতুকের টাকা দিতে পারবেনা বলে জানায়। গৃহবধূ জানায়, বাবা আর কোন টাকা দিতে পারবেনা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বামী ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই গৃহবধূ ফাতেমাকে অমানুষিক নির্যাতন করতে শুরু করে। শ্বশুর বাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। গৃহবধূর বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আরো ৫০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও পাষন্ড স্বামী ফরহাদ মন্ডল তার বাবা-মা, বড়ভাই মিলে গৃহবধূকে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয় এবং শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।
ঘটনাটি তার বাবা-মাকে জানালে গৃহবধূর বাবার কাছে টাকা না থাকায় ১১/১২ দিন পূর্বে মেয়ের জামাইকে একটি গরুর বাছুর প্রদান করে। কিন্তু গৃহবধূর বাবা টাকা না দেয়ায় ০৭/১২/২০১১ তারিখ রাতে গৃহবধূ ফাতেমাকে তার স্বামী ফরহাদ শারিরিক নির্যাতন করে এবং একপর্যায়ে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পরে গ্রেফতার আসামী ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড়ভাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে গৃহবধূর বাবা-মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর দেয়। নিহত গৃহবধূর বাবা-মা ঘটনাস্থলে এসে তার মেয়েকে ফরহাদের শয়ন কক্ষের মেঝেতে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এবং তার গলায় ও বাম চোখের উপরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়।
ঘটনার পরে ০৯/১২/২০১১ তারিখে নিহত গৃহবধূ’র বাবা বাদী হয়ে পাষন্ড স্বামী ফরহাদ মন্ডল, তার বড় ভাই মোঃ ফজল, বাবা হামিদ আলী এবং মা মোছাঃ ফরিদা বেগমকে আসামী করে নাটোর জেলার সিংড়া থানায় যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর কারণে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ধৃত ফরহাদকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ফরহাদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে এক বছর পর সে বিদেশে (ওমানে) চলে যায়। দীর্ঘ ৩ বছর ওমানে প্রবাস জীবন শেষ করে পূনরায় বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। বিদেশ থেকে আসার পর সে দ্বিতীয় বিবাহ করে। বিবাহ করে তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করে। সেখানে সে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
ঘটনার পর দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৭/০১/২০২৪ ধৃত ফরহাদের মৃত্যুদন্ড রায় প্রদান করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।