যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিকে অপহরণের অভিযোগে অপহরণকারী চক্রের ছয় বাংলাদেশি সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ফেডারেল আদালত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ, মারধর ও যৌন নিপীড়ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আইনজীবিরা জানিয়েছেন। তারা সকলেই নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর জামাইকায় অধিবাসী।
গত বুধবার (১০ জানুয়ারী) আদালত তাদের অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ইউনাইটেড ষ্টেটস এটর্নীর অফিস থেকে মিডিয়া অফিসগুলোতে প্রেরীত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন-সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), শাহেদ আলম (২৯), আবু চৌধুরী (২৮), আনজু খান (২৮), সুলতানা রাজিয়া (৩৮) ও ইফফাত লুবনা (২৪)। এদের মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী।
আদালতের নথিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে এ ছয় জনের বিরুদ্ধেই। আর আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ইউনাইটেড ষ্টেটস এটর্নীর অফিস থেকে খবরটি প্রকাশ করার পর নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশ ও প্রচারিত হয়োয় কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির অভ্যন্তরে ‘অপহরণ’-এর এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেনি। ইস্টার্ন ডিস্ট্রক্ট অব নিউইয়র্কের রাষ্ট্রীয় কৌসুলি ব্রেয়ন পিস বলেছেন, গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ অভিযুক্ত রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়া অপর এক বাংলাদেশী ব্যক্তিকে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ১৮১ স্ট্রিটের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি হোন্ডা এসইউভি গাড়িতে তুলে অপহরণ করেন এবং হত্যারও হুমকী দেন। এছাড়াও তারা তাকে বেদম মারধর করতে থাকেন। পরে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উলঙ্গ করে তা ক্যামেরায় ধারণ করে সংঘবদ্ধ এই অপহরণকারী চক্র। এসময় অপহৃত ব্যক্তি পানি পান করতে চাইলে তাকে অপহরণকারীরা চেতনানাশক মিশ্রিত পানি পান করায়। এতে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তার ঘুম ভাঙ্গে।
ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারী) বিবাদী পক্ষের আইনজীবি সারাহ স্যাকস সুলতানা রাজিয়ার হয়ে আদালতে শুনানি করেন। তিনি দাবি করেন অপহৃত ওই ব্যক্তির হাতে তার মক্কেল গত ৫ বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। আর সে কারণে আত্মরক্ষায় সুলতানা রাজিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবি। তার দাবি অপহৃত ব্যক্তি রাজিয়ার চুল ধরে টানছিলেন আর তিনি আত্মরক্ষা করতে চেষ্টা করছিলেন।
এদিকে, অপর ঘটনায় ২০২৩ সালের ১১ মে আবু চৌধুরী ও লুবনা নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডের ব্রডওয়ে এভিনিউর ৭২ স্ট্রিটের কাছে অপর এক বাংলাদেশীকে অপহরণ করে। অপহৃত এসময় আবু চৌধুরী জোর করে অপহৃতকে একটি মিনিভ্যানে তুলে নেন এবং তাকে পেটাতে শুরু করেন। পরে তারা অপহৃতকে একটি হোটেলে নিয়ে যান এবং আবু চৌধুরী তার সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেন। এবং অপহৃতর বাবার কাছে ফোন করে আবু চৌধুরী ২০,০০০ ডলার মুক্তিপণ দাবী করেন বলেও আদালতের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। অপহরণের তিন দিন পর আবু চৌধুরী তাকে চোখ বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রেখে যান বলেও প্রমান পেয়েছেন প্রসিকিউটররা। পরে অপহৃত ব্যক্তি তার চোখ খুলে একটি জানালা দিয়ে বাইরে আসেন এবং নেইবারহুডের লোকজনের কাছে ৯১১ কল করতে বলেন।
অভিযুক্ত রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়াকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয়। আর আবু চৌধুরী ও লুবনাকে আগেই আটক করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত আরো একজন পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, এফবিআই ও নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ডিটেকটিভ শাখার অফিসারগণের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয়েন্ট ভায়োলেন্ট টাস্ক ফোর্স’ দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রদানের পরই আদালত রায় প্রদান করেন।