থ্রিলার গল্প, অথচ চোরগোপ্তা রোম্যান্সের ঢেউ আছে। নাটকীয় মোড়ে ভরা, অথচ আচমকা কমেডির রিলিফও আছে। আর কী আছে ‘মেরি ক্রিসমাস’-এ রক্তমাংসের কিছু চরিত্র আর তাঁদের অভিনয়। যা অতিরঞ্জিত নয়। এখানেই পরিচালক শ্রীরাম রাঘবনের সাফল্য।
সাদা-কালোর বদলে ধূসর রঙে বেশি জোর দেন পরিচালক রাঘবন। তাই তো ‘আন্ধাধুন’-এর মতো সিনেমা তৈরি করতে পেরেছিলেন তিনি। তবে ‘আন্ধাধুন’-এর প্রত্যাশা নিয়ে এই সিনেমা দেখতে যাবেন না। কারণ এর ‘ধুন’ কোনও নির্দিষ্ট বাদ্যযন্ত্রে বাজে না। তা মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে ভিন্ন ছন্দ তৈরি করে। এ ছবি খানিকটা ছায়ার মতো। প্রতি মুহূর্তে লুকোচুরি খেলা রয়েছে।
কাহিনি শুরু হয় অ্যালবার্ট (বিজয় সেতুপতি) ও মারিয়াকে (ক্যাটরিনা) দিয়ে। আর গল্প সেই সময়ের যখন মুম্বইকে বম্বে বলা হতো। বহু বছর পর বম্বের বাড়িতে ফিরেছে অ্যালবার্ট। চারদিকে ক্রিসমাস ইভের আবহ। প্রতিবেশির দেওয়া হোমমেড ওয়াইন বাড়িতে রেখেই বেরিয়ে পড়ে। ঢোকে রেস্তরাঁয়। সেখানেই মারিয়ার দেখা পায়। সঙ্গে তাঁর ছোট্ট মেয়েও ছিল। অচেনা বন্ধুত্ব গাঢ় হত। নতুনত্বের নেশা ঘিরে ফেলে অ্যালবার্টকে। এই নেশা কাটে মারিয়ার স্বামীর রক্তাক্ত দেহ দেখে।
টুইস্ট এক নয় একাধিক। যেন কোনও রোলারকোস্টার রাইড। প্রথমার্ধে গল্প একটু ঢিমে তালেই চলে। খানিকটা জ্যাজ সঙ্গীতের মতো। বিরতির পর গতি বাড়তে থাকে। কয়েকটি জায়গায় চমকে যেতে হয়। বিজয় সেতুপতি দুরন্ত অভিনেতা। কোন জায়গায় ঠিক কতটা মশলা প্রয়োজন তা তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন। ক্যাটরিনা কাইফ নিজেকে যেন পরিচালকের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন। তার ফল ক্যামেরার সামনে দেখা গেয়েছে। এই দুজনই ছবির সিংহভাগ জুড়ে রয়েছেন। সঞ্জয় কাপুর সামান্য সুযোগেও বেশ ভাল অভিনয় করেছেন।
ক্যামিও চরিত্রে দেখা গিয়েছে রাধিকা আপ্তেকে। টিনু আনন্দ, অশ্বিণী কালসেকর, বিনয় পাঠক, প্রতিমা কাজমিও স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছবি একেবারেই রাঘবনের সিগনেচার ফিল্ম। শেষেই সবচেয়ে বেশি চমক। যেন ‘চেরি অন দ্য টপ’। সুতরাং সাসপেন্স থ্রিলার যদি আপনার পছন্দের বিষয় হয় সিনেমা হলে গিয়ে ‘মেরি ক্রিসমাস’ দেখে আসুন। ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’, ‘অ্যানিম্যাল’দের ভিড়ে এমন সিনেমাও তো প্রয়োজন।