৪ বছরের সন্তানকে খুন করলেন ডেটা বিজ্ঞানী সূচনা !


সুমাইয়া তাবাস্সুম: , আপডেট করা হয়েছে : 09-01-2024

৪ বছরের সন্তানকে খুন করলেন ডেটা বিজ্ঞানী সূচনা !

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী সূচনা শেঠ স্নাতকোত্তর করেন পদার্থবিজ্ঞানে। এর পর তিনি পাড়ি দেন আমেরিকায়। সন্তানহত্যায় অভিযুক্ত সূচনা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টারের প্রাক্তনী। রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটেও গবেষক ছিলেন। বেঙ্গালুরুর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সংক্রান্ত স্টার্ট আপের মালকিন সূচনা শেঠ এই ক্ষেত্রে ছিলেন বিশ্বের প্রথম ১০০ মহিলার মধ্যে অন্যতম। গত ১২ বছর ধরে তিনি কর্মরত ডেটা বিজ্ঞানী হিসেবে। এহেন মেধাবিনী কেন খুন করলেন নিজের শিশুপুত্রকে? তদন্তে উঠে আসছে তাঁর বিঘ্নিত দাম্পত্যজীবনের কথাই।

বেঙ্গালুরুর স্টার্ট আপ ‘মাইন্ডফুল এআই ল্যাব’-এর সিইও তথা প্রতিষ্ঠাতা সূচনাকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে কর্নাটকের চিত্রদুর্গ থেকে। তদন্তকারী গোয়েন্দারা জানিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্যাগবন্দি ছেলের দেহ। স্বামী বেঙ্কট রমনের সঙ্গে সূচনার বিঘ্নিত দাম্পত্যই এই হত্যার পিছনে মূল অনুঘটন বলে ধারণা পুলিশের। উত্তর গোয়ার পুলিশ সুপার নিধিন ভালসান জানিয়েছেন,‘‘এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত স্তর আছে।’’

তদন্তকারীদের সূচনা জানিয়েছেন স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আজ অত্যন্ত তিক্ত। আদালতের একটি নির্দেশ নিয়েও তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১০ সালে বেঙ্কট রমন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সূচনার। আদতে কেরলের বাসিন্দা বেঙ্কট বর্তমানে কর্মসূত্রে ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছেন। ২০১৯ সালে সূচনা-বেঙ্কটের এক পুত্রসন্তান হয়। জানা গিয়েছে, সন্তান জন্মানোর এক বছরের মধ্যেই ২০২০ সালে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। সম্পর্কের ফাটল তার পর থেকে ক্রমশ চওড়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দাম্পত্য কলহ পৌঁছয় আদালতে।

বিবাহবিচ্ছেদের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া এখনও চলছে। কিন্তু সন্তানকে মায়ের হেফাজতে রাখারই নির্দেশ দেয় আদালত। তবে শুধুমাত্র রবিবারগুলিতে সন্তানের সঙ্গে বাবার দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের সূত্রের দাবি, সূচনা সেই বন্দোবস্ত নাকি চাইতেন না। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁর মধ্যে সব সময় একটা উদ্বেগ কাজ করছিল। পুত্রকে দেখা করতে দিলেই যদি স্বামীর তার হেফাজতের দাবি করেন, এই ভয় তাঁকে ক্রমশ গ্রাস করছিল।

পুলিশ সূত্রে খবর, ছেলেকে নিজের হেফাজতে রাখাই নিরাপদ বলে মনে করতেন সূচনা। তবে সমস্যাটা শুরু হয়েছিল রবিবারগুলিতে সন্তানকে তার বাবার সঙ্গে দেখার বিষয়টি নিয়ে। বাবার থেকে দূরে রাখতেই সূচনা শিশুপুত্রকে খুন করার পরিকল্পনা করেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তাই আরও একটা নতুন রবিবার আসার আগেই সন্তানকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

গোয়েন্দাদের দাবি, খুনের পরিকল্পনা করেই সন্তানকে নিয়ে গোয়ায় যান সূচনা। সেখানে ক্যান্ডোলিমে একটি হোটেলে ওঠেন। তার পর সেখানেই খুন করেন সন্তানকে। সোমবার ক্যান্ডোলিমের ওই হোটেল থেকে চেক আউট করেন সূচনা। হোটেল থেকেই ঠিক করে দেওয়া স্থানীয় একটি ট্যাক্সি চড়ে তিনি কর্নাটকের উদ্দেশে রওনা দেন। হোটেলের সাফাইকর্মীরা পরে যখন সূচনা যে ফ্ল্যাটে ছিলেন, সেখানে পরিষ্কার করতে যান, তাঁরা দেখতে পান ফ্ল্যাটের মেঝেতে ইতস্তত রক্তের দাগ। তাঁদের সন্দেহ হওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। তার পরই হোটেলের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, গোয়া থেকে ছেলেকে ছাড়া একাই কর্নাটকের উদ্দেশে রওনা দেন সূচনা। তাঁকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করে, ছেলে কোথায়? উত্তরে ডেটা বিজ্ঞানী জানান, ফতোরদায় এক বন্ধুর বাড়িতে ছেলেকে রেখে তিনি জরুরি কাজে বেঙ্গালুরু ফিরছেন। বন্ধুর নাম, ঠিকানাও পুলিশকে দেন সূচনা। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরোটাই ভুয়ো। ওখানে ওই নামে কেউ থাকেনই না। তার পরই ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারেন তাঁরা কর্নাটকের চিত্রদুর্গে রয়েছেন। তাঁকে নিকটবর্তী থানায় যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় পুলিশ। এর পর আইমঙ্গলায় ট্যাক্সিটিকে আটকানো হয়। তল্লাশি চালিয়ে একটি ব্যাগের ভিতর থেকে শিশুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সূচনার ইন্দোনেশিয়াবাসী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে ভারতে ফেরার। অভিযুক্ত সূচনাকে জেরার জন্য গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]