ভারত-মালদ্বীপ দ্বন্দ্ব : এবার প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে অপসারণের দাবি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 09-01-2024

ভারত-মালদ্বীপ দ্বন্দ্ব : এবার প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে অপসারণের দাবি

ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা এবার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল মালদ্বীভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) অন্যতম নেতা মোহাম্মদ আজিম প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে অপসারণ করতে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য দলের এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অপর নেতা মোহাম্মদ নাসিম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটূক্তির অভিযোগে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তলব করার জন্য পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মুইজ্জুর পূর্বসূরী ইব্রাহিম সোলিহ এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহীদও মোহাম্মদ মুইজ্জু এবং তার রাজনৈতিক দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের কঠোর সমালোচনা করেছেন। দেশটির পার্লামেন্টের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ইভা আবদুল্লাহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেছেন, মুইজ্জুর মন্ত্রিসভার সদস্য ও তার অনুসারীরা ভারত সম্পর্কে ‘ঘৃণাপূর্ণ ভাষা’ ব্যাবহার করেছেন এবং এ ইস্যুতে ভারতীয়দের ক্ষোভ যুক্তিসংগত।

মালদ্বীপের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং এমডিপির অন্যতম জেষ্ঠ্য নেতা মারিয়া আহমেদ দিদি দেশটির বর্তমান সরকারকে ‘দূরদৃষ্টিহীন’ এবং ‘বিবেচনাবোধ বর্জিত’ উল্লেখ করে এক বার্তায় বলেছেন, ‘ভারত কেবল আমাদের পুরনো এবং পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্রই শুধু নয়, এই দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সাধারণ মানুষের সঙ্গে ৯১১ ফোনকলের সম্পর্কের সমান। আমরা সব সময় ইন্ডিয়া ফার্স্ট নীতি মেনে চলেছি।’

গত সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন মোহাম্মদ মুইজ্জু। দেশটির রাজনৈতিক দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনসি) এই শীর্ষ নেতা ভারতবিরোধী এবং চীনঘেঁষা রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনে তার জয়ের প্রধান চাবিকাঠিও ছিল ব্যাপক ভারতবিরোধী অবস্থান।

অন্যদিকে তার পূর্বসূরী মোহাম্মদ সোলিহ ভারতপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত এবং তার দল এমডিপিও ভারতঘেঁষা।

মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের পর। সম্প্রতি ভারতের সর্বদক্ষিণের এই কেন্দ্রশাসিত দ্বীপটি ভ্রমণে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভ্রমণের কিছু ছবি পোস্ট করেন তিনি। সেই সঙ্গে ভারতীয় পর্যটকদের লক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের আমন্ত্রণও জানান।

মোদির এসব ছবি পোস্ট করার পর কমেন্ট সেকশনে সেগুলোর সমালোচনা করেন মালদ্বীপের কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারপন্থী রাজনীতিক।

তাদের বক্তব্য, ভারতীয় পর্যটকদের মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষা দ্বীপে ভ্রমণের বার্তা দিতেই এসব ছবি পোস্ট করা হয়েছে।

কিছু ছবিতে তাকে ‘জোকার’ বা ‘পুতুল’বলে মন্তব্য করা হয়। আপত্তিকর মন্তব্য করা হয় ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়েও।

এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করেন সর্বস্তরের ভারতীয়রা। দেশটির ক্রিকেট এবং চলচ্চিত্র তারকারাও রয়েছেন এ তালিকায়। ফেসবুক-টুইটারে ‘বয়কটমালদ্বীপ’ হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়ে এবং মালদ্বীপ ভ্রমণে ইচ্ছুক বিভিন্ন ভারতীয় পর্যটকের বিমান টিকিট বাতিলের হিড়িক শুরু হয়।

প্রথম দিকে ব্যাপারটিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। তবে সোমবার মুইজ্জু বেইজিং সফরে যাওয়ার পর সেই বিতর্ক আবার ব্যাপকভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়।

চীনপন্থী মুইজ্জু সম্ভবত আশা করেছিলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে বেইজিং পাশে দাঁড়াবে। তবে তার পরিবর্তে বেইজিং তাকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে।

মাত্র ২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ মালদ্বীপের প্রধান অর্থনৈতিক খাত পর্যটন। এই খাতটির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে দেশটির অন্যান্য খাত। এছাড়া মালদ্বীপ প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর দেশ।

করোনা মহামারি ও তার পর এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যখন ব্যাপক অর্থসংকট ও দেউলিয়া দশা পার করেছে, তখনও কেবল এই পর্যটন খাতের ওপর ভর দিয়ে ভালোভাবে টিকেছিল মালদ্বীপ। আর এই পর্যটকদের অধিকাংশই ছিলেন ভারতীয়।

এমডিপির আরেক নেতা এবং মালদ্বীপের সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, শিগগিরই যদি দুই দেশের মধ্যমকার উত্তেজনা প্রশমিত না হয়— সেক্ষেত্রে মালদ্বীপের অর্থনীতিকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।

‘আমি খুব চিন্তিত…..এটা সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে,’ এনডিটিভিকে বলেন আহমেদ মাহলুফ। সূত্র : এনডিটিভি


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]