আর মাত্র কয়েকদিন পর দ্বাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৭ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচারণা চলছে। ৫ জানুয়ারী মধ্যরাতে থামবে নির্বাচনী প্রচারণার রণতরী। তাই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা এবং ভোটার ও ভোটের হিসাব-নিকেশ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ছোট-বড় কিছু রাজনৈতিকদল অনুপস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচনে 'বিপুল ভোটার উপস্থিত' করে একটি 'অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন' দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ।
তবে অনেকেই মনে করছেন, দেশের প্রধান বিরোধী দল-বিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো হবে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নির্দেশনা মেনে রাজশাহীর মাঠ পর্যায়ের নেতারা ভোটার টানার নানা কৌশল নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন।
বিরোধীদল নির্বাচনে না আসায় এমনিতেই কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই রাজশাহীর ৬টি আসনে। এরপরও ক্ষমতাসিন দলের মনোনিত নৌকা প্রতিকের সাথে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী কাঠামোটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে হচ্ছে। কিন্তু এক সময়ের বিএনপি-জামায়াতের ঘাটি খ্যাত রাজশাহীতে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া বিএনপি-জামায়াত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান এবং কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নিয়মিত লিফলেট বিতরণ করেছে। তাই শেষ পর্যন্ত কারও পক্ষে জয় এলেও ভোটদানের হার বৃদ্ধি করা এখন ক্ষমতাসিন দলের উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দসহ প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে মানুষের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছেন। তাই কী হতে যাচ্ছে রাজশাহীতে সেই আলোচনাই এখন নতুন করে আলোচনার রসদ যোগাচ্ছে সবার মুখে। এক সময়ের জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী জয় পেলেও তা যেন কম ভোটের জয় না হয় সেজন্য রাত-দিন এক করে দেওয়া হচ্ছে। নৌকার প্রার্থীসহ আওয়ামীলীগের বিশাল কর্মী সমর্থকরা প্রচারণার এই শেষ দিনগুলোতে শহরের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন। কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার টার্গেট নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
রাজশাহীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন এর মধ্য দিয়ে অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বীহীন হয়ে পড়েছে। তাই এই প্রতিদ্বন্দ্বীহনতাই ক্ষমতাসিনদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিত করা।
এত কিছুর পরও নির্বাচন নিয়ে প্রকৃত অর্থেই নির্ভার হতে পারছেন না নৌকার প্রার্থীরা। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় একদিকে আগে থেকেই এই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন বলছে একটি পক্ষ। এরপরও ক্ষমতাবিনদের মনোনিত প্রার্থী থাকার পরও স্বতন্ত্র হওয়ার সুযোগ দেয়ায় রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতেই শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসে নির্বাচনী কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখেছে ।
তবে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নির্বাচনের শুরু থেকেই তাদের প্রাণহীন প্রচার-প্রচারণা নিয়ে এলাকাজুড়ে নানান ধরনের গল্প ডালপালা মেলেছে। এখানে নেই নৌকার কোন বিদ্রোহী বা শক্ত প্রার্থী।
এখন পর্যন্ত যারা রাজশাহীর অধিবাসী এবং যারা বাইরে থেকে আসছেন তারা সবাই কমবেশি দেখেছেন যে, নগর প্রচারণায় নৌকার প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়া কোথাও কোনো প্রার্থীর তেমন প্রচারণা নেই। এখনও পোস্টার, ফেস্টুন, মাইকিং ও ব্যানারসহ অন্যান্য প্রচার সামগ্রী কোনো প্রার্থীরই তেমনভাবে চোখে পড়ছে না। পুরো দিনের মধ্যে কিছু প্রচারপত্র বিলি ও বিকেলে একটি নির্বাচনী মিছিল দিয়েই অনেকে প্রচারণার কাজ সারছেন। পরিস্থিতি অনেকটা এমন যেন কোনো ‘নিয়ম রক্ষার’ নির্বাচন চলছে রাজশাহীতে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তাই যেটুকু না করলেই নয়; সেটুকুই করছেন। তাদের বিপরীতে শুরু থেকে একাই রাজশাহীর নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
তবে জেলা ও মহানগরের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার কমিটির সমন্বায়করাু বলেন, এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নির্বাচনী সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ করেছেন তারা। নির্বাচনের আগে সভা-সমাবেশ শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে। তাদের লক্ষ্য সবাইকে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করা। যেন সবাই কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যেন ভোট দেওয়া থেকে বিরত না থাকেন। কেন্দ্রে যেন স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে।
রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগের লক্ষ্য ৭০ শতাংশ ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা করতে পারলে সব ক্ষেত্রে সফল হবো। এরপর আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারবো শত ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বিপুল সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। অতএব, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।