বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর ইসি :


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 29-12-2023

বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর ইসি :

বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর ইসি : তিন শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ > কয়েকজনকে জরিমানা > মামলা ৩ প্রার্থীর বিরুদ্ধে 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ। মাঠে সেনা নামানোর সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে আচরণবিধি মানাতে ইতোমধ্যে ৩ শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। প্রতিটি আসনের বিপরীতে একজন নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের অধীনে চলছে একটি নির্বাচনী মনিটরিং টিম। কোনো অনিয়ম হলেই তারা প্রার্থীকে ডেকে এনে জবাব চাইছে, সতর্ক করছে ইসি। করছে জরিমানাও। পক্ষপাত্বির অভিযোগে বদলি করা হয়েছে ২ শতাধিক ডিসি, এসপি, ওসিকে। আচরণবিধি ভাঙার দায়ে তিন শতাধিক প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে, গত বুধবার কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে ১ লাখ টাকা এবং বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। মামলা হয়েছে তিন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
এদিকে নির্বাচনী মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে আজ বৃহষ্পতিবার থেকে সারাদেশে টহলে নামছে বিজিবি। আর আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে সশস্ত্র বাহিনী ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮ দিন মাঠে থাকবে তারা। এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ সদস্য। এর মধ্যে আরো থাকবে পুলিশ, র?্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা।


সিইসিসহ অন্য চার কমিশনার চষে বেড়াচ্ছেন সারাদেশ। বৈঠক করছেন ডিসি, এসপি, প্রার্থী ও এজেন্টদের সঙ্গে। সবার একই বার্তা- নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতেই হবে। কোনো অনিয়ম বা বুথ দখলের চেষ্টা হলে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের উদাহরণও টানছেন কমিশনাররা।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না, কারো কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ পেলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। একটা ভোটও কারচুপির চেষ্টা করা হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রার্থীদের আচরণবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়ে তিনি প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন। সিইসি বলেছেন, নানা কারণে এবার ভোট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বিভিন্ন দেশ কথা বলছে আমাদের দেশ নিয়ে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করার দাবি আছে বিদেশিদের। ভোটের মাঠে অনিয়ম করতেই হবে- এই আচরণ থেকে প্রার্থীদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোট পাল্টাতে পারে না। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা হয়। প্রার্থীরা ঘরে বসেই জানতে পারেন ফলাফল। সিস্টেমের ওপর আস্থা রাখতে হবে।


এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সিইসি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহিংসতা বা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পোস্টার ছেঁড়া- এগুলো হয়েছে। কিন্তু

মোটা দাগে খুব বেশি ঘটনা হয়েছে বলে মনে হয় না। সহিংসতা একেবারেই হয়নি সে কথাটা বলছি না। সিইসি বলেন, কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকবেন। সেখানে বাইরের অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি যেন প্রবেশ করতে না পারে। আমরা এখানে জোর দিচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনের কাছে কেউ হেভিওয়েট নয় বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান। তিনি জানান, ভোটের প্রচারে বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনার পর কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। এই কমিশনার বলেন, আমরা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা দেখাতে বলেছি। দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নির্বাচন জমিয়ে দেয়ার কৌশলে নৌকার প্রার্থীদের বিপরীতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয়ায় ভোটের মাঠে বাড়ছে উত্তেজনা। মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগার বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শক্তি আর জনপ্রিয়তা প্রদর্শন করতে গিয়ে এরই মধ্যে প্রতিপক্ষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা দেয়া, মারধর, হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতার শত শত ঘটনা ঘটেছে। পিরোজপুর ও মাদারীপুরে দুজনের মৃত্যুও হয়েছে। মাঠে লড়ছেন প্রায় ১ হাজার ৯শ প্রার্থী।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে ইসির যে সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া আছে তার পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। আবার কমিশন তো একা নির্বাচন করে না, অনেক স্টেকহোল্ডার রয়েছে। তার মধ্যে প্রশাসন অন্যতম। তারা ইসির কথা মানছে কিনা সেটা বেশি জরুরি। সেই সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব ডিসি, এসপি বা কর্মকর্তারা জড়িত, তাদের ইসির নির্দেশ প্রতিপালনে বাধ্য করা দরকার। আর প্রার্থীরা বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা তো ইসির আছে। শুধু শোকজ করলে হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে কমিশনকে।
ইসির কঠোর অবস্থানের বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে কঠোর হতেই হবে ইসিকে। তবে শোকজ নোটিস দিলেই চলবে না। এটা যাতে প্রার্থীরা মেনে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর শোকজের পরও কেউ যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। তিনটি মামলা হয়েছে, আরো বেশি মামলা হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল যেসব কঠোর বার্তা মাঠে দিচ্ছেন- কাজে ততটা কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। মাঠে যে পরিমাণ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে সে তুলনায় শোকজ বা জরিমানা তেমন হয়নি। তিনি বলেন, মনোনয়নপ্রাপ্ত ও মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের ক্ষমতার দম্ভের কারণে মাঠে সহিংসতা বা গণ্ডগোল হচ্ছে। তবে সেটা থামাতে ইসির মোটেই সে ধরনের কঠোর অবস্থান দেখতে পাচ্ছি না; দৃষ্টান্তমূলক বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ ইসির হাতে সাংবিধানিকভাবে প্রচুর ক্ষমতা আছে, তার সঠিক প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। শুধু কয়েকটি শোকজ, কয়েকজন ডিসি-এসপি-ওসিকে বদলি করে ভোট সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। ইসিকে আরো কঠোর অবস্থানে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]