৫ বছরেরও বেশি সময় পর আজ বরিশালে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবকিছু ঠিক থাকলে সকাল ১০টায় পদ্মা সেতু পেরিয়ে সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে তার। বিকালে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে একদিকে যেমন বইছে আনন্দের বন্যা, তেমনই বরিশাল নগরীকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ঝকঝকে-তকতকে হয়ে গেছে প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল। বঙ্গবন্ধুকন্যার জনসভায় ১০ লাখ লোকসমাগমের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্ধারিত হয় শেখ হাসিনার বরিশালে আসার কর্মসূচি। এরপর থেকেই তার সফর সফল করতে মাঠে নামে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। দফায় দফায় সভা আর নানা প্রস্তুতিতে দিনরাত এক করে ফেলেন দলের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে গঠিত হয় বাস্তবায়ন কমিটি। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি হন এর প্রধান সমন্বয়কারী। সমন্বয়কের দায়িত্ব পান সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দারসহ আরও ৭ জনকে করা হয় কমিটির সদস্য। জনসভামঞ্চ নির্মাণসহ সমাবেশস্থলের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত।
যুগান্তরকে মেয়র খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বরিশাল। মঞ্চ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সমাবেশস্থলের যাবতীয় আয়োজনও শেষ। জাতির পিতার কন্যার বক্তব্য শুনতে যারা আসবেন, তাদের জন্য মাঠে ব্যবস্থা করা হয়েছে সুপেয় পানির। জনসমাগম সুশৃঙ্খল রাখতে কাজ করবেন স্বেচ্ছাসেবীরা। মেডিকেল টিমসহ দায়িত্ব পালন করবেন নগর ভবনের প্রশিক্ষিত কর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নগরীর সড়কগুলোর ছোটখাটো সংস্কার। বিশেষ করে যেসব পথে আওয়ামী লীগ সভাপতির গমনাগমনের সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব সড়কের যাবতীয় ত্রুটি এরই মধ্যে দূর করেছে সিটি করপোরেশন। সড়ক বিভাজককে নতুন করে রং করার পাশাপাশি সড়কদ্বীপগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল রঙে। তবে এবার প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে নগরীতে কোনো তোরণ নির্মিত হয়নি। তাকে স্বাগত জানাতে কোনো ব্যানার-ফেস্টুনও লাগানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক দলের সদস্য বলরাম পোদ্দার জানান, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নয়, জননেত্রী বরিশালে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে। তিনি এখানে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেবেন। যেহেতু এখন নির্বাচনকালীন, তাই তোরণ নির্মাণ কিংবা ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এ কারণেই কঠোরভাবে বিষয়টি প্রতিপালন করছি আমরা। প্রধানমন্ত্রীও চান নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে সবকিছু হোক। তাই দলীয় সভাপতির এবারের আগমনে কোনোরকম তোরণ নির্মাণ কিংবা ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়নি।
কর্মসূচি বাস্তবায়নে গঠিত কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি বলেন, দক্ষিণবঙ্গের লাখো জনতা এখন অধীর অপেক্ষায় আছে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের।
বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে যেসব খবর পাচ্ছি তাতে আজকের জনসভায় লোকসমাগম ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। প্রমাণ করে দেব যে, দেশের অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বেশি ভালোবাসি।
এদিকে ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে নানা স্বপ্ন আর আশার জাল বুনছে এই অঞ্চলের মানুষ। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেস সড়ক হলেও এখনো শুরু হয়নি ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা ৬ লেন সড়ক নির্মাণের কাজ। থমকে আছে এ রুটে রেললাইন নির্মাণ। এছাড়া কুয়াকাটায় আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ এবং ভোলার গ্যাস বরিশালে সরবরাহসহ আরও অনেক চাওয়া রয়েছে এখানকার মানুষের। আজকের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব আশা পূরণের ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লস্কর নূরুল হক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তো না চাইতেই আমাদের সবকিছু দেন। তিনি নিজেই জানেন আমাদের কী দরকার। তবে এটা যেহেতু নির্বাচনি জনসভা, তাই এখানে তিনি কোনো প্রতিশ্রুতি দেবেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। কারণ, আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচনি জনসভায় কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কোনো ওয়াদা অথবা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া আইনসংগত নয়।