অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে রূপপুর


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 27-12-2023

অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে রূপপুর

পাবনার ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের এলাকায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে এবং সাংস্কৃতিক ভাবধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে একসময়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা সংশয় ও উদ্বেগ ছিল। প্রকল্পে প্রায় ৩০ হাজার দেশি-বিদেশির কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক কেন্দ্র বদলে দিয়েছে এলাকার মানুষের ভাগ্য। এখন সবার মুখে মুখে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জয়গান। অপার সম্ভাবনাময় আগামীতে আরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধুর প্রতীক্ষা স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশবাসীর।

রূপপুর প্রকল্পের ছোঁয়ায় বদলে গেছে ঈশ্বরদীর প্রত্যন্ত গ্রাম রূপপুর। একসময় সন্ধ্যা হলেই যেখানে নিকশ কালো অন্ধকারে নেমে আসতো রাত্রির নিস্তব্ধতা, সেখানেই এখন দিনরাত কর্মচাঞ্চল্য। প্রায় পাঁচ হাজার রাশিয়ান, বেলারুশ, কাজাখ, ভারতীয়সহ বিদেশিদের পদচারণায় বদলে গেছে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। 

চরের বিরানভূমিতে গড়ে উঠেছে আকাশচুম্বী সুদৃশ্য আবাসিক ভবন। রয়েছে আলো ঝলমলে শপিংমল, বিদেশি আদলের রেস্তোরাঁ ও একাধিক রিসোর্ট। চাঙা হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

ভাবের আদান-প্রদানসহ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও রুশ ভাষাভাষী কয়েক হাজার বিদেশি কর্মীদের অবস্থানে রাশিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদান ঘটছে। নতুন হাট গ্রিনসিটির সামনে গেলেই চোখে পড়বে রাশিয়ানদের আনাগোনা। তারা মিলেমিশে আছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে। প্রায় পাঁচ হাজার রাশিয়ান নির্মাণ শ্রমিক ও প্রকৌশলী এখানে কর্মরত। রাশিয়ানদের সুবাদে স্থানীয়দের মাঝে রুশ ভাষা ও জীবনধারার খুলেছে নতুন জানালা। সেইসাথে রুশ ভাষা ও সংস্কৃতি শিখছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয়রা ২০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন প্রকল্পে। বেকারত্ব দূর হওয়ায় গ্রামীণ পরিবেশও বদলে গেছে। অভাব-অনটন দূর হওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরেছে পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে। তাই অনেকেই বলেন, রূপপুর এখন যেন রুশ নগরীতে পরিণত হয়েছে।

বিদেশীদের জন্য গ্রিনসিটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০ তলা বিশিষ্ট ২০টি ভবনে থাকছেন প্রকল্পের বিদেশি কর্মীরা। গ্রীনসিটির বাইরে চারপাশে গড়ে ওঠা হোটেল-রেঁস্তোরা, ক্যাফে, সেলুন, কাঁচাবাজার, বিপণি বিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। বিদেশি নাগরিকদের কেনাকাটাসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটাতে পাকশী, সাহাপুর, রূপপুর ও ঈশ্বরদী শহরে গড়ে উঠেছে একাধিক বিপণি বিতান, আধুনিক শপিংমল, সুপারশপ, রিসোর্ট ও থ্রি-স্টার মানের তারকা হোটেল।

রাশিয়ান ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রুশ ভাষায় সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। ফল ও সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে প্রয়োজনের তাগিদে রাশিয়ার নাগরিকদের সঙ্গে কেনাবেচা করতে করতে বাঙালিরাও শিখেছেন রাশিয়ান ভাষা। এমনকি সেলুনগুলোতেও বাংলার পাশাপাশি ঝুলছে রুশ ভাষার সাইনবোর্ড। রাশিয়ানদের চলাফেরায় বোঝার উপায় নেই যে এটা বাংলাদেশ নাকি বিদেশের কোন নগরী। 

খাবার-দাবারেও পরিবর্তন এসেছে রাশিয়ান ও বাঙালিদের। রাশিয়ান খাবারের পাশাপাশি স্পাইসি (ঝালযুক্ত) মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি, সাদা ভাত, তন্দুর রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টিও খাচ্ছে বিদেশিরা। গ্রিনসিটির সামনে আমদানি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি রুই-কাতলা-পাঙ্গাস ও ইলিশ মাছ। রেঁস্তোরাগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন পদের রাশিয়ান খাবার।

স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম রূপপুর পারমাণবিককে কেন্দ্র করেই জয়নগর এলাকায় দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট বানিয়েছেন। সেখানে সবসময় রাশিয়ানদের পদচারণা। এখানে রয়েছে সুইমিং পুল।  

পাকশী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশিদের কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর এই এলাকা হয়ে ওঠেছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। বদলে দিয়েছে এলাকার মানুষের ভাগ্য। হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানে এলাকায় আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন মানুষের মুখে মুখে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জয়গান। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]