কর্মকর্তারা পক্ষ নিলে কঠোর ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে প্রশাসন। এ জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসিল্যান্ড, ইউএনও বা ডিসিসহ যে কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ পেলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ অন্য সিনিয়র সচিবরা এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, সম্প্রতি বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, নিরপেক্ষতার সঙ্গে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে। তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ভোটে কর্মকর্তাদের যেন কোনো পক্ষ না থাকে। নিরপেক্ষতার সঙ্গে সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে বলেছেন।
একই সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা কোনো পক্ষ নিলে এটি হবে তার ব্যক্তিগত দায়। এ বিষয়ে সরকার কঠোর হবে। নির্বাচন আচরণবিধি না মানলে বা কেউ ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করবে। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা পেয়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা ইতোমধ্যে তাদের অধীন ডিসিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা জমে ওঠায় সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার নির্দেশ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গত সপ্তাহে সব বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে এমন নির্দেশনার পর সব বিভাগের কমিশনাররা তাদের অধীন ডিসি এবং ইউএনওদের এ বিষয়ে সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটের আগে সব ডিসিকে নিয়ে একটি সমন্নয় সভা হতে পারে। বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে ইতোমধ্যেই এটা হয়েছে। এ ছাড়া ডিসিরা তাদের ওপর দায়িত্ব বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের পক্ষপাত আচরণ করা যাবে না বলে দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে সুষ্ঠু ভোট উপহার দেবে এটাই সবার প্রত্যাশা। সে কাজই তারা করছে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে যে নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়েছে তা আমরা মাঠ প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, ইসির নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে নির্বাচনের মতো। এখানে অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত কিছু যেন না হয় সে বিষয়ে বলা হয়েছে।
প্রশাসনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে, যেহেতু আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়া অনেকটা নিশ্চিত, সে কারণে আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। এই নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা একদিকে যেমন সরকারের ইমেজ বৃদ্ধি করবে অন্যদিকে প্রশাসনের প্রতিও আস্থা বাড়াবে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে অনেক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব ধরনের কর্মকর্তা জড়িত থাকেন। ভোটের কর্মকান্ডে জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা যদি নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন তাহলে তাদের ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূতি উজ্জ্বল হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইতোমধ্যেই সারা দেশে ওসি-ইউএনও, ডিসি, এসপি রদবদল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে এই রদবদল করা হয়। এরই মধ্যে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। গতকাল ফরিদপুরের এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তার নামে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক বদলি করা হবে। তাই নির্বাচন নিয়ে সতর্ক মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।