রাজশাহীর তানোরে ব্র্যাকের আলু বীজ রোপণ করে বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য আলু চাষি নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। এবার ব্র্যাকের আলু বীজ কেলেঙ্কারির নিয়ে কৃষকদের মাঝে উত্তেজনা ও কৃষিবিভাগে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্র্যাকের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের চরম ইমেজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) মাদারীপুর, ভবানীপুর ও বিহারইল মাঠে সিংহভাগ আলুখেতে ব্র্যাকের বীজ রোপণ করা হয়েছে। কিন্ত্ত অধিকাংশ আলুখেতে আলু গাছ গজায়নি। মাদারীপুর গ্রামের আলু চাষি আল-মামুনের ১৩ বিঘা, আব্দুল করিম ১৫ বিঘা, ভবানীপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ১৫ বিঘা ও তরিকুল ইসলামের ১৯ বিঘা আলুখেতে তেমন কোনো আলু গাছ গজায়নি। আবার সামান্য যেটুকু গাছ গজিয়েছে তাতে গাছের গোড়ার বীজ পচে গেছে, গাছ ফেঁপে উঠছে। ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিরা জানান, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজ থেকে উচ্চ মুল্যে তারা এসব আলু বীজ কিনে রোপণ করেছেন। তাদের ধারণা এসব রিপ্যাক করা নিন্মমাণের নকল আলু বীজ দিয়ে ডিলার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
এদিকে উপজেলার রায়তান বাজেআকচা হিন্দুপুকুর ও মথুরাপুর মাঠের ৫ জন কৃষকের প্রায় সাড়ে ১২ বিঘা জমির রোপণ করা আলু বীজ অঙ্কুরিত না হয়ে
পচে গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ব্র্যাকের আলু বীজ ডিলার ধুরইল বাজারের গোলাম মোর্তুজা ও কথিত সাব-ডিলার তানোর পৌরসভার জিওল মোড়ের হাবিবুর রহমান ব্র্যাকের আলু বীজ রিপ্যাক করে খাবার আলু বীজ আলু বলে বিক্রি করেছে।
সরেজমিন উপজেলার রায়তান বাজেআকচা হিন্দুপুকুর মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আলুখেত। মাঠে অনেক আলুচাষির আলুখেতে আলুর চারা গজায়নি। কৃষকরা জানান, বিগত যে কোন বছর থেকে এবার প্রতি বিঘায় খরচ বেড়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে।
এখন পর্যন্ত্য এক বিঘা আলুচাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তারা ঋণ-মহাজনের টাকায় আলু চাষ করেছেন।
ক্ষতিপুরুন না পেলে তাদের নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে।
আকচা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, তিনি আলুর বীজ কিনতে জিওল মোড়ের হাবিবের দোকানে বুকিং দিয়েছিলেন। তার কাছে থেকে ব্র্যাকের এ-গ্রেড জাতের আলু বীজ কিনে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে রোপণ করেছিলেন। রোপণের ১৯দিন অতিবাহিত হলেও তাঁর প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমির আলুর বীজের চারা ওঠেনি। আবার কিছু চারা উঠলেও সেগুলো আলু মাটির ভেতরে পচে গেছে, আগে কখানো এমন হয়নি। তার ধারণা তাকে খাবার আলু বীজ আলু বলে দেয়া হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক
কৃষক আলম, আশরাফুল, গোলাম রাব্বানী ও নূর ইসলাম বলেন, আলু রোপণ করেছি, কিন্তু মাটির ভেতরে সব পচে যাচ্ছে। আমরা ধুরইল বাজারের ডিলার মুর্তজার মাধ্যমে সাব-ডিলার হাবিবের দোকান থেকে ৮৫ বস্তা ব্র্যাকের এ-গ্রেড আলু লাগিয়েছিলাম। তাঁরা আরও বলেন, আলুতে একবার সেচ দেওয়ার পর মনে করেছিলাম গাছ উঠবে। কিন্তু জমিতে অনেক আলুর গাছ ওঠেনি। আবার উঠলেও সেসব গাছের আলু পচে গেছে। এবিষয়ে পৌরসভার জিওল মোড়ের সাব ডিলার হাবিব বলেন, চলতি মৌসুমে ব্র্যাকের এ-গ্রেড ২৩১ বস্তা ও বি-গ্রেড ৩০০ বস্ত ডায়মন্ড আলুর বীজ বিক্রি করেছি। এ- গ্রেডের আলুর বীজ প্রায় ৫৫ কৃষক কিনেছেন। এর মধ্যে ৫ জন কৃষকের অভিযোগ করেছেন, তাদের আলুর বীজ সঠিক ছিল না। কৃষকেরা সঠিকভাবে রোপণ করতে পারেনি। সেইসঙ্গে কয়েকদিন আগে অতিবর্ষণে লাগানো ওই আলু বীজের ক্ষতি হয়েছে। আলু বীজ রোপণের পর চারা গজানোর পরে শুকিয়ে যাওয়ায় দায় আমার নয়। আমি যে বীজ আলু পেয়েছি তাই বিক্রি করেছি। এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলার ধুরইল বাজারের ব্র্যাকের আলু বীজ ডিলার মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোর্তুজা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সমস্যা হয়েছিল, ব্র্যাক থেকে লোক এসে দেখে গেছে ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ব্র্যাকের টেরিটরি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজনের অভিযোগ পেয়ে ওই মাঠে গিয়েছিলাম। এটা কৃষকের ভুল। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করছে না। তারপরেও আমাদের মনিটরিং টিম ওই মাঠে গিয়ে আলুখেত দেখবেন। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।