দেশের বিভিন্ন শিল্পনগরী এবং শিল্প পার্কের প্লট বরাদ্দ ও অর্থ পরিশোধে নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা দিয়ে বিসিকের নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। প্লট বরাদ্দে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ, ১৪ কিস্তিতে সাত বছরে টাকা পরিশোধ এবং চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত প্লটের মূল্য পরিশোধ করলে ২ শতাংশ আবার ফেরত দেওয়া হবে।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান মিঞা একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেন, যা ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী বা শিল্প পার্কে প্লট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৩’ হিসেবে অভিহিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ পেতে নারী উদ্যোক্তারা এককালীন জমা (ডাউন পেমেন্ট) দিতে পারবেন প্লটের মোট দামের ১৫ শতাংশ।
বাকি অর্থ ১৪ কিস্তিতে মোট সাত বছরে পরিশোধ করবেন, যা আগে ছিল ১০ কিস্তি। ১৪ কিস্তিতে পরিশোধের ক্ষেত্রে প্লটের সম্পূর্ণ মূল্য সুদসহ হিসাব করে এককালীন জমা ও কিস্তি নির্ধারিত হবে। অন্যদিকে পুরুষ উদ্যোক্তাদের প্লটের মূল্যের ২০ শতাংশ এককালীন জমা দিতে হবে। বাকি অর্থ ছয় বছরে ১২ কিস্তিতে শোধ করতে হবে।
প্লট দখল বুঝে পাওয়ার বরাদ্দপত্র জারির এক বছর পর থেকে কিস্তিগুলো দিতে হবে।
কোনো শিল্পনগরী বা শিল্প পার্কের জমি অধিগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে সাময়িকভাবে নির্ধারিত প্লটের মূল্য সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করলে পরে চূড়ান্তভাবে প্লটের নির্ধারিত মোট মূল্যের ১.৫ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ফেরত দেওয়া হবে ২ শতাংশ হারে।
অন্যদিকে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিল্পনগরী বা শিল্প পার্কে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হবে।
কোনো এলাকায় উপযুক্ত নারী উদ্যোক্তা না পাওয়া গেলে জেলা বা বিশেষায়িত প্লট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি আগ্রহী অন্য উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দিতে পারবে।
নীতিমালায় প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরো বলা হয়েছে, শিল্পনগরী যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাসিবের সভাপতি, বিসিকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধানসহ ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটির মাধ্যমেই প্লট বরাদ্দ দিতে হবে। তবে জেলা পর্যায়ের এই কমিটি ১৫ হাজার বর্গফুট পর্যন্ত আয়তনের প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে। ১৫ হাজার বর্গফুট থেকে ৪৫ হাজার বর্গফুট পর্যন্ত আয়তনের প্লট বিসিকের চেয়ারম্যান বরাদ্দ দেবেন।
এর বেশি হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বা সচিবের অনুমোদন নিতে হবে।
তবে বিশেষায়িত শিল্পনগরী বা শিল্প পার্কের জেলা কমিটি দুই লাখ ২৫ হাজার বর্গফুটের প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে। এর বেশি হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বা সচিবের অনুমতি নিতে হবে। শিল্প প্লটের বরাদ্দপত্র জারির ৩০ দিনের মধ্যে উদ্যোক্তাকে দখল অবস্থান হস্তান্তর করতে হবে।
বিসিকের শিল্পনগরী ও সমন্বয় শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে সর্বশেষ প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞাপনের পর গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্লট বরাদ্দের আবেদন পড়েছে প্রায় ২০০টি। আর সারা দেশে এখন পর্যন্ত শিল্পনগরী ও শিল্প পার্ক রয়েছে ৮২টি। এসব শিল্পনগরীতে ১২ হাজার ৩১৩টি শিল্প প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ১৯টি শিল্প প্লট ছয় হাজার ১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে। এসব নগরীতে ফাঁকা আছে এক হাজার ৯৮টি প্লট। বরাদ্দ নেওয়া শিল্প প্লটে চার হাজার ৫৩৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু রয়েছে। রুগ্ণ বা বন্ধ হয়ে আছে ৪৫৬টি শিল্প ইউনিট। ৮২টি শিল্পনগরীর মধ্যে বরাদ্দযোগ্য খালি প্লট রয়েছে ২১টিতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি দামে কিনতে হয় বিসিকের জমি। এই মতের সঙ্গে বিসিকের কর্মকর্তারাও একমত পোষণ করেন। তাঁরা বলছেন, দাম কিছুটা বেশি হলেও দেশের ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায় সহজেই শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে সার্বিকভাবে দেশে বিনিয়োগ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিসিকের শিল্পনগরী ও সমন্বয় শাখার মহাব্যবস্থাপক অখিল রঞ্জন তরফদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য ১০ শতাংশ প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে তাঁরা সহজে যেন প্লট পান এবং প্রতিযোগিতা করতে না হয়। আগেও ১০ শতাংশ বরাদ্দের ব্যবস্থা ছিল কিন্তু কোটা পূরণ হয়নি। অন্যদিকে এককালীন টাকা জমার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে ১০ কিস্তিতে টাকা পরিশোধ ও ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, এবার কিস্তি বাড়ানো হয়েছে। ১০ কিস্তি যখন ছিল তখন ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডাররা সময় বাড়ানোর দাবি করেছিলেন।
বিসিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া হয়।