বিদেশে রেকর্ড পরিমান কর্মীরা কাজ না পেয়ে দুর্ভোগে


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 18-12-2023

বিদেশে রেকর্ড পরিমান কর্মীরা কাজ না পেয়ে দুর্ভোগে

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। গত নভেম্বরে ১২ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গেছে। একই সঙ্গে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মূল দুটি সমস্যা ছিল কাজ না পেয়ে মাসের পর মাস বসে থাকা এবং কাজ পেলেও ঠিকমতো বেতন না পাওয়া।

বিশেষ করে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমানে যাওয়া কর্মীরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এই তিনটি দেশেই সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কর্মী ভোগান্তি দূর করতে দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, কাজ না থাকলেও কর্মী পাঠাচ্ছেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, দূতাবাসগুলোর জনবলসংকটে অনেক সময় কর্মীরা প্রত্যাশিত সেবা পান না। তবে কর্মীদের দুর্ভোগের  অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয় মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাস।

এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব অভিবাসী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অভিবাসীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে অভিবাসনের শক্তি উন্মোচন করা।’

বিএমইটির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গেছে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৮ জন, যা গত বছরের চেয়ে এক লাখ ১৩ হাজার ১৫ জন বেশি। গত বছর বিদেশে কর্মী গিয়েছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। এর আগে ২০১৭ সালে কর্মী গিয়েছিল ১০ লাখ আট হাজার ৫২৫ জন।

অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এভাবে কর্মী যাওয়া অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এর সংখ্যা গিয়ে ১৩ লাখে পৌঁছাবে। তবে কর্মীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধির জন্য উন্নতমানের ও বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার চালু করার দাবি জানান অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের যুগ্ম সম্পাদক টিপু সুলতান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এই ধরনের রেকর্ড হয়েছে। তবে এত  কর্মী গেলেও নারী কর্মীর সংখ্যা কমে গেছে। গত বছর নারী কর্মী গিয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার। এ বছর গেছে ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার। এখানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নারী কর্মী কম গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখনো এই শ্রমবাজারে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এখন আমরা যে কর্মীগুলো পাঠাই, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অদক্ষ কর্মী। আমরা যদি এখানে দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারি, সে ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স অনেক বেশি আসবে। এখনো ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ আমাদের যে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো রয়েছে, তারা যত দ্রুত কর্মী পাঠাতে পারে, আমরা তত দ্রুত পারি না। আমাদের দেশে নানা জটিলতার কারণে অনেক সময় লেগে যায়। সরকারি বিভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে যদি সময় কম ব্যয় হয়, এর সঙ্গে যদি দক্ষতার উন্নয়ন করতে পারি, সে ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান ধারা আমরা সামনে আরো বাড়াতে পারব।’

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি কর্মীরা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমানে গিয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। উন্নত জীবনের আশায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে গিয়ে অনেক কর্মীকে মাসের পর মাস বসে থাকতে হয়েছে। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন তাঁরা। এতে অনেক কর্মী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি কর্মসংস্থানের চেয়ে কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওমানের শ্রমবাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব যান মৌলভীবাজারের ইসমাইল হোসেন। সাত মাস কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও কোনো কাজ পাইনি। খাবারও ঠিকমতো পেতাম না। পরে অনেক কষ্টে নিজেই কাজ খুঁজে নিই। ওইখানে আমার থাকা খুবই কষ্টের ছিল। তাই চলে এসেছি।’

নওগাঁর মান্দা উপজেলার আলামিন হোসেন অনেক দিন ধরে মালয়েশিয়া আছেন। মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বছরের শেষ দিকে যারা আসছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ চার থেকে ছয় মাস ধরে বসা। এখানকার কম্পানি তাদের এক জায়গায় বন্দি করে রেখেছে। পাসপোর্ট-ভিসা তাদের কাছে। কাজ চাইলে উল্টো পাঁচ হাজার রিঙ্গিত দাবি করে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় দেড় লাখ টাকা। যেসব খাবার দেয়, তা অনেক সময় খাওয়া যায় না।’

ওমানপ্রবাসী মোস্তফা মামুন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গত বছর ও চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী ওমানে এসেছে। এতে কর্মসংস্থানে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) যুগ্ম সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘আমরা কিন্তু চাই না একজন কর্মীও দুর্দশায় থাকুক, নির্যাতিত হোক বা কাজ না পাক। এর পরও এই ঘটনাগুলো ঘটছে। এই অপরাধটা করছে ওই দেশগুলোর কম্পানি। এখন এই কর্মী নেওয়ার পর যখন কাজ পেল না, তখন আমাদের দূতাবাসগুলোর উচিত ওই কম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া বা তাদের থেকে ক্ষতিপূরণটা বুঝে নেওয়া। দূতাবাস কিন্তু প্রতিটি ভিসা সত্যায়ন করে। অর্থাৎ এই ভিসাগুলো আমরা পাওয়ার আগেই তারা বলে যে সব ঠিক আছে। এগুলোর পরও কর্মীরা কাজ পায় না, বেতন পায় না। এই কর্মী ভোগান্তি দূর করতে দূতাবাসকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’

অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দূতাবাসের ওপর দায় চাপালেও বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠাতে মরিয়া হয়ে থাকে। কারণ কর্মী পাঠানো তাদের কাছে এক ধরনের ব্যবসা। ফলে তারা কাজ আছে কী নেই, তার কোনো খোঁজ না নিয়েই কর্মী পাঠিয়ে থাকে।

এই বিষয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) এ এস এম জাহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো আছে, তারা কর্মী পাঠাতে চাপ তৈরি করে। ফলে কাজ না দিতে পারলেও কম্পানিগুলোকে কর্মী নিয়ে আসতে হয়।’

জনবলসংকটের ফলে অনেক সময় প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া যায় না বলে স্বীকার করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। তিনি বলেন, ‘বিদেশে এবারও আমরা রেকর্ডসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছি। কিন্তু সে অনুযায়ী আমাদের দূতাবাসগুলোতে জনবল নেই। এতে প্রত্যাশিত সেবা অনেক সময় পাওয়া যায় না। কর্মী ভোগান্তির অভিযোগ আমরা না পেলেও আপনাদের মাধ্যম থেকে জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দূতাবাস থেকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’

এ ব্যাপারে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যদি কর্মী ভোগান্তি পুরোপুরি দূর করতে চাই, তাহলে এই অভিবাসন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।’ সূত্র: কালের কন্ঠ।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]