ইজ়রায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় জ্বলছে গাজ়া স্ট্রিপ। উত্তরে জাবালিয়া শিবির ও দক্ষিণে খান ইউনিস কার্যত ধ্বংসস্তূপ। ইজ়রায়েলি সেনাদের দাবি, এই দুই জায়গায় মানুষের ভিড়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে হামাস নেতারা। ইজ়রায়েল উত্তর গাজ়া ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, এখনও হাজার হাজার বাসিন্দা মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ আহত হচ্ছেন। প্রাণ হারাচ্ছেন বহু। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত কাল শুধু জাবালিয়াতেই অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।
ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, হামাসের সব ক’টা ডেরাতে স্থলপথে ও আকাশপথে হামলা চালানো হচ্ছে। মাটির নীচে বেশ কিছু ঘাঁটি পাওয়া গিয়েছে। সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। মুখোমুখি সংঘর্ষে বহু জঙ্গি নিহত। অস্ত্র ভান্ডার পাওয়া গিয়েছে। ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যমও জানিয়েছে, জাবালিয়ায় হামাসের মূল ডেরাটি দখল করেছে বাহিনী। বেশ কিছু সুড়ঙ্গ, অস্ত্র ভাণ্ডারের খোঁজ মিলেছে। কিন্তু এর জেরে জাবালিয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন ছত্রখান। এখনও ১ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ রয়েছেন জাবালিয়ায়। কাতারের একটি সংবাদ সংস্থার এক কর্মী মোমেন আল-শারাফির পরিবারের ২২ জন আজ প্রাণ হারিয়েছেন জাবালিয়া শিবিরে। ওই সংবাদ সংস্থার আর এক কর্মীও স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়েছেন। ৫৬ বছর বয়সি হানান আলতুরক আট সন্তানের মা। জাবালিয়ার কাছেই তাঁর বাড়ি। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধবিরতি চলাকালীন আমরা হাসপাতালে চলে যাই। ভেবেছিলাম বাড়ির থেকে অন্তত হাসপাতাল নিরাপদ। কিন্তু কাল হাসপাতালের ভিতরে এসে পড়েছে গোলা। আগুন ধরে যায়। আমরা কোনও মতে পালাই।’’ তাঁর আকুতি, ‘‘খুব ভয় করছে, আমার বাচ্চারা এ বার না-খেতে পেয়ে মরবে।’’
যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে কোনও ত্রাণ ঢুকছে না গাজ়ায়। খাবারের জন্য হাহাকার। হানানের স্বামী মাহের ২৯ নভেম্বর প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি স্থানীয় বাজারের খাবারের খোঁজে গিয়েছিলেন। সে সময়ে ইজ়রায়েলি হামলায় নিহত হন তিনি। হানান বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না কোথায় যাব। আমার কোনও টাকাপয়সা নেই। কোনও খাবার নেই। জলটুকুও নেই।’’
গাজ়ার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিজি মুনির আল-বুর্শ বলেন, ‘‘জাবালিয়া বাজারে গণকবর খোড়া হয়েছে। ১০০ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে সেখানে। দেহগুলি অনেক দিন ধরে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে পড়েছিল। পচন ধরে গিয়েছিল তাতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আজ সতর্ক করেছে, গাজ়া স্ট্রিপে এ বার ভয়ানক রোগ সংক্রমণ ঘটবে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজ়ার জন্য নিযুক্ত হু-কর্তা রিচার্ড পেপারকর্ন বলেন, ‘‘পানীয় জলের সঙ্কট মাত্রা ছাড়িয়েছে। দূষিত জল থেকে রোগ ছড়াতে পারে যে কোনও মুহূর্তে।’’ খান ইউনিসেও ভয়াবহ অবস্থা। সেখানকার আল-নাসের হাসপাতালে ৩৫০ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ভর্তি রয়েছেন হাজার হাজার রোগী। রিচার্ড বলেন, ‘‘ট্রমা কেয়ার ওয়ার্ডে গেলে মনে হবে সেটাই যুদ্ধক্ষেত্র।’’