যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন প্রবাসী প্রথম স্ত্রীর জমানো ৯ লাখ টাকা চুরি করে দেশে গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বোস্টন প্রবাসী বাংলাদেশি ইকবাল উদ্দিন (২৬) নামের এক প্রতারক। গত ২৪ নভেম্বর নিজ এলাকা চুয়াডাঙ্গা থানায় ইকবালের প্রথম স্ত্রী ইয়াসমিন সুলতানার দায়ের করা মামালায় সদর কোর্ট থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলে গত রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইকবালকে জেল হাজতে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানার দক্ষিণ ইদিলপুর গ্রামের মোঃ ইকরামুদ্দিনের ছেলে ইকবাল উদ্দিন ২০১২ সালে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। প্রায় ৩ বছর পর দেশে গিয়ে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা থানায় সাদেক আলী মল্লিক পাড়ার মৃত আব্দুল ওহাবের মেয়ে ইয়াসমিন সুলতানাকে বিয়ে করেন। ইয়াসমিনের আগের বিয়ে এবং ২টি সন্তানের কথা জেনেই তার পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিয়ে হয়। পরে ইয়াসমিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকেই ইকবালের মা ও বোনেরা তাকে নিয়মিত আগের বিয়ে ও সন্তানের কথা বলে খোটা দিতে থাকেন। তাদের সকল মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করেও ২০১৫ সাল থেকে ইকবালের সাথে সংসার করছিলেন ইয়াসমিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকেই কোন কাজ করতো না ইকাবাল। পুরো সংসার চালাতো তার স্ত্রী। এমনকি ইয়াসমিনের কাছ থেকে নিয়মিত পকেট খরচও নিতো ইকবাল। এক পর্যায়ে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিয়ে থাকেন ইয়াসমিন ও তার পরিবারকে। মাঝে মধ্যে ইয়াসমিনকে তালাক দেবারও হুমকি দেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে ইকবাল ইয়াসমিনের সাথে নানা ছলচাতুরী ও অভিনয় করতে থাকে। কিছুতেই কাজ না হলে ইকবাল কৌশলে তার স্ত্রীর জমানো ৮ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ টাকা) চুরি করে গত ৭ আগষ্ট ২০২৩ বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে গত ১৯ নভেম্বর ইয়াসমিন বোস্টন পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন সেখানে গিয়ে তার নিজ এলাকা সীতাকুন্ডে দ্বিতীয় বিয়ে করে।
এ খবর পেয়ে গত ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশে ছুটে যান ইয়াসমিন। ঐদিন বিকেলে তার ভাতিজা তৌহিদ আলম ইয়াসমিনের পক্ষে চুয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন (মামলা নম্বর: চু.জে.আ.স-২৩১৭১)। পুলিশ মামলাটি আদালতে পাঠালে গত ১ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সীতাকুন্ড থানা পুলিশের কাছে পাঠান। গত রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সীতাকুন্ড থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইকবালকে জেল হাজতে পাঠায়।
ইকবালের বোস্টন প্রবাসী স্ত্রী ইয়াসমিন সুলতানা জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকেই কোন কাজ করতো না ইকবাল। নানা অজুহাতে বোস্টনের বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে ইকবাল। সে ঢাকা ও সীতাকুন্ড এলাকার বেশ কয়েক যুবককে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যাবার কথা বলে মোট অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। এছাড়াও বোস্টনে অবস্থানকালে বিএনপির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বাংলাদেশে শিবিরের কর্মী ছিলেন। বোস্টনের বেশ কিছু মেয়ের সাথেও তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল বলে জানান ইয়াসমিন। ইকবালের গ্রেপ্তারের খবর বোস্টন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।