আলোচনা ব্যর্থ, ইজ়রায়েলি হানায় জ্বলছে গাজ়া স্ট্রিপ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 03-12-2023

আলোচনা ব্যর্থ, ইজ়রায়েলি হানায় জ্বলছে গাজ়া স্ট্রিপ

জ্বলছে গাজ়া স্ট্রিপ। কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে উত্তর থেকে দক্ষিণে। সবচেয়ে বেশি হামলা চলেছে দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে। গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইজ়রায়েলি বিমানহানায় অন্তত ১৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জখম ৫৮৯ জন। ২০টি বাড়িতে বোমা ফেলেছে তারা। হামাস ও ইজ়রায়েল একে অপরকে দুষে চলেছে। দু’দলেরই এক অভিযোগ, ‘প্রতিপক্ষ শান্তিচুক্তি ভেঙেছে’।

কাতারের মধ্যস্থতায় দোহায় আজ ফের শান্তি-আলোচনায় বসেছিল হামাস-ইজ়রায়েল। কিন্তু তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ইজ়রায়েল সরকারের হয়ে এ ধরনের বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন তাদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের কর্তারা। শোনা গিয়েছে, তাঁদের দেশে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে ইজ়রায়েল জানিয়েছে, বৈঠকে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এ অবস্থায় কাতার ব্রিটেনের সঙ্গে বৈঠক করেছে আজ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ ইজ়রায়েলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। যদিও এই মুহূর্তে যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই।

ইজ়রায়েলের নির্দেশে উত্তর ও মধ্য গাজ়া স্ট্রিপ ফাঁকা করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ দক্ষিণে চলে এসেছেন। এখন সেখানে কমপক্ষে ২৩ লক্ষ মানুষের বাস। অথচ এখন দক্ষিণকেই পাখির চোখ করছে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত কাল থেকে দক্ষিণ গাজ়া স্ট্রিপে লিফলেট ছড়ানো শুরু করেছে তারা। বার্তা, এলাকা ফাঁকা করে দিতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবেন সাধারণ মানুষ, তার উত্তর নেই। কূটনীতিকরা বলছেন, ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর পূর্বসুরি গোল্দা মেহিরের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান। তাঁর বার্তা, শুধু দেশ নয়, গোটা মহাদেশের যে কোনও কোণায়, যেখানে যত ইজ়রায়েলের শত্রু রয়েছে, তাদের শেষ করতে হবে। একটি আমেরিকান দৈনিকে লেখা হয়েছে, নেতানিয়াহু এই মর্মে তাঁদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদকে নির্দেশও দিয়েছেন। মোসাদ সেই ছক কষতেও শুরু করেছে। তুরস্ক, লেবানন, কাতারের বিভিন্ন শহরে হামাসের অফিস রয়েছে। পরিকল্পনা যেখানে যত হামাসের বড় মাপের মাথা রয়েছে, সকলকে শেষ করা হবে। কাতারে হামাসের দফতর খোলা হয়েছিল ২০১২ সালে। তাদের এক কর্তা জানিয়েছেন, আমেরিকার অনুরোধে দফতরটি খোলা হয়েছিল। তারা সমন্বয়ের পথ খুঁজছিল। এখন সেই দফতর ইজ়রায়েল ও আমেরিকার নিশানায়।

মোসাদের প্রাক্তন ডিরেক্টর এফরেম হালেভি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, যে পথে এগনো হচ্ছে, তাতে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতাবস্থা ব্যাপক ভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। হালেভির বক্তব্য, গোটা বিশ্বে হামাসের সব ঘাঁটি ভেঙে ফেললেও ইজ়রায়েলের বিপদ কমবে না। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা বিশ্ব জুড়ে

হামাসকে নিশানা করা হলে, পরিকল্পনামাফিক এক এক করে তাদের সব নেতাকে নিশ্চিহ্ন করা গেলে, সেটা যোগ্য প্রতিশোধ হতে পারে, তবে কখনওই চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে না।’’ ইসমাইল হানিয়ে, মহম্মদ দেফ, ইহা সিনওয়ার ও খালেদ মাশাল— হামাসের ‘ওয়ান্টেড তালিকায়’ রয়েছে এমন কয়েকটি নাম। হানিয়ে প্যালেস্টাইনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান। দেফ হামাসের সামরিক বাহিনীর নেতা, ইজ়রায়েলের ‘এক নম্বর’ শত্রু। রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্তত ৬ বার তাঁকে মারার চেষ্টা করেছে ইজ়রায়েল। সিনওয়ার ২৩ বছর ইজ়রায়েলের জেলে ছিলেন। ২০১৭ সালে গাজ়ায় হামাসের প্রধান নির্বাচিত হন। মাশাল হামাসের পলিটবুরোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গত দু’মাস ধরে ইজ়রায়েলকে সব দিক থেকে সাহায্য করে চলেছে আমেরিকা। গত ২৪ নভেম্বর থেকে সাত দিন যুদ্ধবিরতি চলেছে। ইজ়রায়েল জানিয়েছে, এ সময়ে সেনাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সাজানোও হয়েছে বাহিনী। আমেরিকা বাঙ্কার ধ্বংস করার জন্য বিশেষ ধরনের বোমা পাঠিয়েছে। হামাসের গোপন ঘাঁটি ভাঙতে এগুলি ব্যবহার করা হবে। অন্তত ১৫ হাজার বোমা ও ৫৭ হাজার গোলা পাঠিয়েছে আমেরিকা। এর মধ্যে রয়েছে ‘১০০বিএলইউ-১০৯ বাঙ্কার বাস্টার বোম্ব’। প্রতিটির ওজন ২০০০ পাউন্ড। আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির জন্য হামাসই দায়ী। তারা চুক্তি ভেঙে যুদ্ধবিরতির মধ্যে পশ্চিম জেরুসালেমে হামলা চালিয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]