ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস ৪ ডিসেম্বর


কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : , আপডেট করা হয়েছে : 03-12-2023

ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস ৪ ডিসেম্বর

৪ ডিসেম্বর। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী উপর চতুর্মুখী আক্রমণ চালিয়ে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিবাহিনী। প্রতি বছর এই দিনটিকে ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী খানসেনারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। পরদিন ২৬ মার্চ এই হত্যাযজ্ঞের খবর জানতে পেরে ফুলবাড়ীতে বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকালে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের করা হয় প্রতিবাদ মিছিল। ওই মিছিলে বাধা, হামলাসহ কিছু বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে অবাঙালিরা। সেই প্রতিবাদে বাঙালিরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানপন্থী কয়েকজন অবাঙালির বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে স্বপরিবারে মারা যান অবাঙালি চিকিৎসক শওকত আলী।

এরপর ২ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফুলবাড়ীকে নিজেদের দখলে নিয়ে নির্যাতন, হত্যা, লুটতরাজসহ ঘরবাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে উপজেলার কাজিহাল, এলুয়ারী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে এসে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করে। এসময় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী শহরে তাদের আগমন রুখতে ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফুলবাড়ী শহরের পশ্চিম পার্শ্বের ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ব্রিজটি এখনও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে রয়েছে। ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ায় মিত্রবাহিনীর ফুলবাড়ী শহরের প্রবেশ করতে বিলম্বের সুযোগে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালিরা বিশেষ ট্রেনে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহীনী। এসময় তারা ফুলবাড়ীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে পৌর শহরের সিএমবি ডাকবাংলোতে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এছার উদ্দিন বলেন, ‘৪ ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ফুলবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য তাদের কিছু মাইন পুতে রাখা ছিল। সেই মাইনে বিস্ফোরিত হয়ে ৩ জন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সদস্য শহীদ হন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ওই শহীদ তিনজনকে শেষকৃত্য সম্পন্নের পর ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের পূর্বপ্রান্তে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে তাদের সম্মানার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।’


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]