বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পরিস্থিতি দেখছে না সরকার


অনলাইন ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 01-12-2023

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পরিস্থিতি দেখছে না সরকার

শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক উদ্যোগের ফলে মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় পড়ার মতো পরিস্থিতি দেখছে না বাংলাদেশ  সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সস্তায় পায় বলেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনে। আর বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের সঙ্গে এই চিঠির সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কিছুই দেখি না।

বাংলাদেশে সে পরিস্থিতিও নেই। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সব কিছু হয়। এদিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

১১ দিন ছুটিয়ে কাটিয়ে পিটার হাস এ সপ্তাহে দেশে ফেরার পর এটিই তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এ বৈঠক প্রসঙ্গে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে ‘রুটিন’ (দৈনন্দিন) বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং পররাষ্ট্রসচিব মোমেন।” যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুকে প্রকাশিত ওই বার্তার সঙ্গে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘গণতন্ত্র’ শব্দটিও যোগ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠক বিষয়ে তিনি অবগত।

নিয়মিত যোগাযোগের অংশ হিসেবে এ বৈঠক করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কিছু কর্মকর্তা ও সাংবাদিকের দেশপ্রেমের ঘাটতি আছে। তা না হলে গোপনীয় চিঠি এভাবে প্রকাশ্যে আসত না। নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সরকার বললেই ব্যবসা বন্ধ হয় না, ব্যবসা হয় মূলত দুই দেশের বেসরকারি উদ্যোগে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে ব্যবসা হচ্ছে না? আমাদের এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোটা উঠে গেলে, তখন অনেকেই দুশ্চিন্তা করেছিলেন। পরে এটার কোনো প্রভাব পড়েনি।’

এদিকে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো চাপ অনুভব করছে না। আমরা প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে কাজ করছি। সামনে দেশের শ্রমিকদের অধিকার কিভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে জোর দিচ্ছি।’

সচিব বলেন, বাংলাদেশকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কিছুই দেখি না। বাংলাদেশে সে পরিস্থিতিও নেই। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সব কিছু হয়।

বাণিজ্যসচিব শ্রম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে বাংলাদেশের ১০ বছর ধরে নিবিড় যোগাযোগের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমাদের শ্রম আইন চারবার সংশোধন করা হয়েছে। গত মাসেও আমাদের শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত একটা উন্নত ব্যবস্থাপনার দিকে যাচ্ছি। শ্রমিকদের সংগঠন করা সহজ করে দেওয়া হয়েছে। আইএলওর সঙ্গে বসে একটি এসওপি তৈরি করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। সেখানে নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যে এত দিনের মধ্যে নিবন্ধন দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই শ্রমনীতি নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা সব দেশকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়। আমেরিকার প্রশাসন দেখতে চায়, বিভিন্ন দেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে কি না।’

শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এটা নিয়ে তারা কাজ করবে। যারা ট্রেড ইউনিয়ন করে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ যাতে কাজ না করে, এটাই তাদের আরজি। এখন অনেক শ্রম সংগঠন। আমরাও চাই, শ্রম সংগঠনগুলো যাতে অব্যাহত কাজ করতে পারে।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা উদ্বেগ নিয়ে ব্যাখ্যা দেবেন কি না—জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে আছে বলে আমি মনে করি না। আর বাণিজ্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ বিশেষ কোনো সুবিধা পায় না। ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক দিয়ে আমেরিকাতে আমাদের পণ্য রপ্তানি করতে হয়। কাজেই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।’

সচিব বলেন, ‘অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য করে, যেখানে গণতন্ত্র নেই। সেখানে একদলীয় শাসন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নেই। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা অনেক উন্মুক্ত, এখানে গণতন্ত্রের চর্চা আছে। সেখানে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে বলে মনে করি না।’

তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি কমার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, রপ্তানি আদেশ কমেছে বৈশ্বিক অন্য পরিস্থিতির কারণে। রপ্তানিটা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় গত দেড়-দুই বছরে অনেক মুদ্রাস্ফীতি ছিল। যখন মুদ্রাস্ফীতি থাকে, তখন পোশাক কেনার চাহিদাও কমে যায়। এ জন্য রপ্তানি কমেছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]