দেশের সবচেয়ে পুরনো গ্যাসক্ষেত্র সিলেটের হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে নতুন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। খনন কাজ শেষে গতকাল গ্যাস প্রাপ্তির এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ার্কওভারের পর সিলেটে এই কূপটিতে নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাসের মজুদ আছে। এ গ্যাসের দাম দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে তুলনা করলে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর আমদানি করা গ্যাসের এলএনজি দাম হিসাব করলে প্রাপ্ত নতুন দাম পড়বে ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এসজিএফএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, এই কূপ থেকে দৈনিক ১৩ মিলিয়ন গ্যাস পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত জুন মাসে কূপটিতে খনন কাজ শুরু হয়। ১৪৯ কোটি টাকায় সিলেট-১০ নম্বর কূপ খনন করে চীনা কোম্পানি সিনোপেক।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করছি। গত ৭ থেকে ৮ মাসে আমাদের গ্রিডে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস যুক্ত হয়েছে। বেশ কিছু কূপে নতুন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো প্রসেস প্লান্ট এবং সঞ্চালন লাইন রেডি না হওয়ায় গ্রিডে আসতে পারছে না। তিনি আশা করছেন, প্রসেস প্লান্ট এবং সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ সমান্তরালভাবে চললেও এসব গ্যাস গ্রিডে যোগ করতে দুই বছরের মতো সময় প্রয়োজন হবে। নসরুল হামিদ বলেন, ভোলা গ্যাসক্ষেত্র আশা দেখাচ্ছে। ভোলার গ্যাস গ্রিডে আনার জন্য পাইপলাইন নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এদিকে সিলেট-১০ এর যে কূপ পাওয়া গেছে, সেখানকার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে সময় লাগবে ছয় থেকে সাত মাস। তিনি জানান, এখন প্রতিদিন ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশীয় খনি থেকে গড়ে ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। বাকিটা আসে আমদানি করা এলএনজি থেকে। হরিপুরে গ্যাস পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আবদুল জলিল প্রামাণিক বলেন, এই কূপ থেকে উৎপাদনে যেতে আরও ছয় মাসের মতো সময় লাগবে। পাইপলাইন বসিয়ে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর আগে ২২ নভেম্বর সিলেট কৈলাসটিলায় পরিত্যক্ত ২ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়। সেখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। প্রসঙ্গত, হরিপুর গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি গ্যাস কূপ রয়েছে। এবার ১০ নম্বর কূপ থেকে উত্তোলন শুরু হবে। ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকার দেশের ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।