বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির কাজ প্রায় শেষ। বাকি আছে ৫ শতাংশ কাজ। এখন নির্মাণকাজ চলছে টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার অংশের। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। এরপরই চালু করা হবে ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি’। ফলে নতুন বছরে চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই এক্সপ্রেসওয়ে হবে নববর্ষের উপহার।
গত ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ওই দিন পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য যানবাহন চলাচল করেছিল। নির্মাণকাজ অসমাপ্ত থাকায় তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী জানুয়ারি মাসে পুরো কাজ শেষ করে চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ তারেকুল ইসলাম বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। এটি চালু হলে চট্টগ্রামে ব্যবসা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ধরনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
এখন দরকার এক্সপ্রেসওয়ে কেন্দ্রিক সংযোগ সড়কগুলো ও তারকা হোটেল নির্মাণ। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এখন টাইগার পাস থেকে লালখান বাজার অংশে কাজ চলছে। এখানে ১৮-২০ গার্ডার বসবে। এগুলোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে অপরাপর অংশেও শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ চলছে। আশা করছি, জানুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ করে পুরোদমে চালু করা যাবে। এটি চালু হলে পতেঙ্গা থেকে মূল শহরে আসতে সময় লাগবে ১০ থেকে ২০ মিনিট। এক সড়ক ব্যবহার করেই সরাসরি যাতায়াত করা যাবে বিমানবন্দরে। সুফল মিলবে বঙ্গবন্ধু টানেলের। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সিডিএ ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকায় পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এই এক্সপ্রেসওয়েটি পতেঙ্গা থেকে শুরু হয়ে লালখান বাজারে শেষ হয়। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৪টি র্যাম্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে দুটি, টাইগারপাস মোড়ে দুটি, আগ্রাবাদ মোড়ে দুটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেড মোড়ে দুটি এবং কেইপিজেড মোড়ে দুটি। প্রতিটি র্যাম্প হবে দুই লেনের এবং একমুখী। চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মিত হয়েছে ৩৮৯টি পিলার এবং বসানো হয়েছে ৩৮৯টি গার্ডার। তবে বিভিন্ন অংশে ওঠানামার জন্য ১৪টি র্যাম্প নির্মাণের কথা থাকলেও সেগুলো এখনো নির্মাণ করা হয়নি। তবে এখনো র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়ক পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট। দুই লেনের সড়কটির নিত্য সঙ্গী যানজট। বিশেষ করে দুই নং গেট, জিইসি মোড়, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ মোড়, ইপিডেজ মোড়, বন্দরটিলাসহ নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে গাড়ি স্থির হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে। এক ঘণ্টার সড়ক পার হতে সময় লেগে যায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। যানজটে পড়ে বিমান মিস করার ঘটনাও কম নয়। দুর্ভোগে পড়তে হয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। গণপরিবহনের যাত্রীদের ভোগান্তিও দীর্ঘদিনের। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হওয়ায় এ সমস্যা নিরসন হবে। পণ্যবাহী ও দূরপাল্লার যানবাহনগুলো এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করলে মূল সড়কে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।