অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার সীমান্ত ঘেঁষে এ বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। বিমানবন্দরটি নির্মাণকাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
১০ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। যানজট থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে ঢাকা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত একটি এক্সপ্রেসওয়ে বানানো হবে। বিমানবন্দরটি চালুর ৮ বছরের মধ্যে যাত্রীর চাপ সামলাতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিন দিন ফ্লাইট ও যাত্রী বাড়ছে। সেই অনুযায়ী ধারণক্ষমতা বাড়ছে না। বর্তমানে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল। কিন্ত কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকার আশপাশে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিমানবন্দর নির্মাণ না হলে শাহজালাল বিমানবন্দরের ওপর যাত্রীদের চাপ এতটাই বাড়বে, যা সামলানো কঠিন হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘একটি জাপানি কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে সমীক্ষা করে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে ২টি জায়গা বিমানবন্দরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিমানবন্দর নির্মাণে ‘ড্রয়িং ডিজাইন’ করে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয় ধরে আমরা একটি প্রস্তাব তৈরি করেছি। সেটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ২টি জায়গার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী একটি নির্বাচন করে দিলেই আমরা বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এ বিমানবন্দর নির্মাণ হলে বহির্বিশ্বের ফ্লাইট চলাচলের পাশাপাশি রাজস্বও বাড়বে।জানা গেছে, বিমানবন্দর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়িকে। ৪ বছর সমীক্ষার পর মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের সীমান্ত ঘেঁষে উপযুক্ত স্থান বেছে নেয় তারা। বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্য ২৮টি স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ১০টি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে। পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত আরও অন্যান্য প্যারামিটার বিবেচনায় ৩টি উপযুক্ত সম্ভাব্য স্থান থেকে ২টি স্থানকে নির্বাচন করা হয়। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভে, মাস্টার প্ল্যান, এয়াররুট, অ্যারোস্পেস, এয়ারট্রাফিক ফোরকাস্ট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর রাজধানীর কাছে আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা নেয়। মূলত ঢাকাকে আকাশ যোগাযোগের সংযোগস্থল বা ‘হাব’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। জাতির পিতার নামে নতুন বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ২০১০ সালে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। প্রকল্প প্রস্তাবনায় এ বিমানবন্দরে তিনটি রানওয়েতে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ৪০০টি ও কার্গোবাহী ২০০টি ফ্লাইট ওঠানামার সুযোগ রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দর নির্মাণের উপযুক্ত জায়গা হিসেবে সরকারের প্রাথমিক বাছাইয়ে উঠে আসে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিল ও ময়মনসিংহের ত্রিশালের নাম।
পরে ত্রিশালকে বাদ দিয়ে আড়িয়াল বিলেই বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করে সরকার। মন্ত্রিসভায় প্রকল্প অনুমোদনের এক বছর পর ২০১১ সালে আড়িয়াল বিলে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণের কাজ। কিন্তু শুরুতেই স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে এ প্রকল্প। আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে জনতা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সংঘর্ষে স্থানীয় জনতার পাশাপাশি, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ কয়েকশ মানুষ আহত হয়। এর পরই নতুন করে বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প থমকে যায়।
আন্দোলনের মুখে আড়িয়াল বিলে জমি অধিগ্রহণের কাজ স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বিমানবন্দর হবে পদ্মার ওপারে, মাদারীপুর কিংবা শরীয়তপুরে। বর্তমানে সরকার চাচ্ছে আগামী নির্বাচনের আগেই বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু করতে। সেভাবে কাজও এগোচ্ছে। এখন প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলেই বিমানবন্দর নির্মাণকাজ শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩৫ সালের পর রাজধানীর পাশে আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে উঠবে। এখন সরকার শাহজালালে থার্ড টার্মিনাল তৈরির কাজ করছে। কিন্তু রানওয়ে তৈরি হচ্ছে না। এটা চালু করলে বিমানবন্দরের সক্ষমতা কিছুটা বাড়বে। তবে এভিয়েশন খাতে এখন বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি, তাতে আগামী এক যুগের মধ্যে এটাও যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হারাবে।
রাজশাহীর সময় / এফ কে