কাবার দুয়ারের অজানা ১০টি তথ্য


ধর্ম ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 20-11-2023

কাবার দুয়ারের অজানা ১০টি তথ্য

সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য কাবা শরিফ হলো পবিত্র তীর্থস্থান। এটা সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদে হারামের অন্তর্গত। সারাবিশ্বের মুসলমানগণ সদা-সর্বদা নামাজের সময় কাবা শরিফকে ক্বিবলা হিসেবে মেনে এর দিকে মুখ করে ইবাদাত করে থাকে।

কাবার দরজায় আরবি ভাষায় ১০টি বিষয় লেখা রয়েছে। ক্যালিগ্রাফি করা কয়েকটি আয়াত অসাধারণভাবে কাবার দুয়ারে সংযুক্ত। কাবার দুয়ারে লেখা কোরআনের এ আয়াতগুলোর অর্থ, তাৎপর্য নিয়েই আজকের আলোচনা।

১. কাবার দরজায় সুরা ফাতহ এর ২৭ নম্বর আয়াত: কাবা শরিফের দরজার উপরের ডানদিকে একেবারে কেন্দ্রে পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতহের ২৭ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে নবীজির স্বপ্নের পূর্ণতার ঘোষণা করা হয়েছে। রসুল সা. ওমরা পালনের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

আল্লাহ বলেন, অবশ্যই আল্লাহ তার রসুলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল-হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে, মাথা মু-ন করে, চুল ছেঁটে, নির্ভয়ে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) জেনেছেন যা তোমরা জাননি। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়। (সুরা আল ফাতহ ২৭)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, সুরার পরিচিতিতে বলা হয়েছে যে, হুদায়বিয়ার সফরের আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নে দেখেছিলেন, তিনি ওমরার উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেছেন। এ স্বপ্নের পরেই তিনি সমস্ত সাহাবিকে উমরার জন্য রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু হুদায়বিয়ায় পৌঁছার পর যখন সন্ধি স্থাপিত হল। ওমরা আদায় ছাড়াই সকলকে ইহরাম খুলতে হল, তখন কারও কারও মনে খটকা লাগল যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বপ্ন তো ওহি হয়ে থাকে, কিন্তু এখন ওমরা আদায় ব্যতিরেকে ফিরে যাওয়ার সাথে সেই স্বপ্নের মিল কোথায়?

এ আয়াতে তার জবাব দেয়া হয়েছে যে, সে স্বপ্ন নিঃসন্দেহে সত্য ছিল। কিন্তু তাতে মসজিদুল হারামে প্রবেশের কোন সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি। এখনও সে স্বপ্ন সত্যই আছে। এ সফরে যদিও ওমরা পালন করা যায়নি, কিন্তু ইনশাআল্লাহু তাআলা সে স্বপ্ন পূরণ হবেই। সুতরাং পরবর্তী বছর তা পূরণ হয়েছিল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিগণ নির্বিঘেœ, নিরাপদে উমরা পালন করেছিলেন।

২. ডানদিকে একটি বৃত্তাকার প্যাটার্নে সুরা ইখলাস: কাবার দুয়ারে বৃত্তাকার প্যাটার্নে পবিত্র কোরআনের সুরা ইখলাসের আয়াতগুলি লিপিবদ্ধ করা আছে। এ সুরায় আল্লাহর একত্ব ও অদ্বিতীয়তা ঘোষণা করে। আল্লাহ বলেন, ১. বলুন (হে নবি), আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। ২. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি,কেউ তাকে জন্ম দেননি। ৪. আর কেউই তার সমতুল্য নন।

৩. কাবার দুয়ারের বাম দিকের একটি বৃত্তাকার প্যাটার্নে সুরা ফাতহ এর ২৯ নম্বর আয়াত: এ আয়াতে নবী মুহাম্মদ সা. ও তার সঙ্গীদের শক্তি, সহানুভূতির উপর জোর দেয়। এ আয়াত রসুল সা.-এর কাফেরদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করে আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসুল। তার সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর। আপোসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে, (কখনও) সিজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। (সুরা ফাতহ ২৯)

৪. কাবার দুয়ারের ডানদিকের বৃত্তাকার চিত্রের নীচে সুরা নুরের ৩৫ আয়াত: বাম দিকে বৃত্তাকার প্যাটার্নের উপরে লেখা সুরা নুরের ৩৫ নম্বর আয়াত। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ আকাশম-লী ও পৃথিবীর নূর। (সুরা নুর ৩৫) ডানদিকে বৃত্তাকার প্যাটার্নের নিচে আরেকটি লেখা আছে। আল্লাহর একত্বের সত্যতা ঘোষণা করে। রসুল সা. এর বিশ্বস্ততার কথা বলে। রসুল সা. এর নবুয়াতের শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকার করে।

৫. দুয়ারের উপরের অংশ বরাবর সুরা বাকারার ১৪৪ আয়াত: যখন কাবা থেকে মসজিদুল আকসার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া শুরু হয়। রসুল সা. আকাশের দিকে তাকাতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, (হে নবী!) আমি তোমার চেহারাকে বারবার আকাশের দিকে উঠতে দেখছি। সুতরাং যে কিবলাকে তুমি পছন্দ কর আমি শীঘ্রই সে দিকে তোমাকে ফিরিয়ে দেব। (বাকারা ১৪৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসরিরগণ বলেন, কিতাবীগণ ভালো করেই জানে কিবলা পরিবর্তনের যে হুকুম দেওয়া হয়েছে তা বিলকুল সত্য। তার এক কারণ তো এই যে, তারা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে মানত এবং তিনিই যে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে মক্কা মুকাররমায় পবিত্র কাবা নির্মাণ করেছিলেন এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ছিল; বরং কোনও কোনও ঐতিহাসিক লিখেছেন (হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামসহ) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সকল সন্তানের কিবলাই ছিল পবিত্র কাবা।

৬. দুয়ারের উপরের অংশ বরাবর কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ১৩৩ আয়াত: সুরা আলে ইমরানের ১৩৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন, নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশম-ল ও পৃথিবী তুল্য। তা সেই মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (সুরা আলে ইমরান ১৩৩)

৭. কাবার পূর্ব দিকের সুরা বাকারার ২৫৫ আয়াত: এ আয়াতটিকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। এ আয়াতে আল্লাহর মহত্ত্বকে জানান দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তার হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে, তার নিকটে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তার জ্ঞান সমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তার কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।’ (সুরা বাকারা ২৫৫)

৮. সুরা ফাতিহা লেখা: কাবার দুয়ারে কোরআনের সর্বপ্রথম সুরা ফাতিহার লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। সুরাটিতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, তার করুণা স্বীকার করা হয়। সরল পথের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, ১. সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। ২. তিনি দয়াময়, অতীব দয়ালু। ৩. প্রতিফল দিবসের মালিক। ৪. আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি। ৫. আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন। ৬. তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। ৭. তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট। (সুরা ফাতিহা)

৯. কাবার গিলাফের নীচের দিকে বৃত্তাকার প্যাটার্নের নিচে সুরা কুরাইশ: কাবার দুয়ারে নীচের দিকে কোরআনের ১০৬ নম্বর সুরা, সুরা কুরাইশ লেখা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ১. যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত। ২. অভ্যস্ত শীত ও গ্রীষ্মের সফরে। ৩. এই ঘরের রবের ইবাদাত তাদের করা উচিত। ৪. যিনি তাদের ক্ষুধামুক্তি দিয়েছেন এবং নিরাপদ রেখেছেন।

১০. কাবার দরজার নিচের দিকে এ দরজার পর্দা গিলাফ বা সিতারাহ কোথায় কিভাবে তৈরি হয়েছে এ বিষয়ে তথ্য দেয়া আছে: বায়তুল্লাহর এ দরজার পর্দাটিকে সিতারাহ বলে। এটি সৌদি আরবের মক্কা শহরেই নির্মাণ করা হয়েছে। বায়তুল্লাহর দুয়ারে এটি হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন হারামাইন শরিফাইনের খাদেম, বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। এ উপহারের উসিলা করে তাকে যেনও আল্লাহ কবুল করেন সে দোয়াও করা হয় দুয়ারের পর্দার একদম নিচের দিকে। সূত্র: ইসলামিক ইনফরমেশন


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]