কাশ্মীর-লাদাখ সীমান্তে তৈরি হচ্ছে এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গপথ!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 18-11-2023

কাশ্মীর-লাদাখ সীমান্তে তৈরি হচ্ছে এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গপথ!

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সীমান্তে একটি সুড়ঙ্গ বানাচ্ছে ভারত। নাম জোজি-লা টানেল।

হিমালয়ের বুক চিরে সেই সুড়ঙ্গপথ তৈরি হচ্ছে জোজি-লার ঠিক নীচে। যা জুড়বে লাদাখের কার্গিল এবং কাশ্মীরের গন্দেরবালকে।

তৈরি হয়ে গেলে ভারতের তো বটেই, এই সুড়ঙ্গপথ এশিয়ারও দীর্ঘতম হবে। তবে তার আগে সুড়ঙ্গটি তৈরি করতে বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভারতকে।

এই সুড়ঙ্গের পরিকল্পিত দৈর্ঘ্য ১৪.২ কিলোমিটার। পাহাড় ফাটিয়ে ওই দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথ তৈরি করতে কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে।

ঘোড়ার নালের আকৃতির দু’টি সুড়ঙ্গপথ পাশাপাশি তৈরি করার কাজ চলছে। সুড়ঙ্গ বানানোর জন্য কার্গিল এবং গন্দেরবালে তৈরি হয়েছে আলাদা বসতি।

দু’দিক থেকে সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে এগোচ্ছে দু’টি দল। কাজ শেষ হলে তাদের মুখোমুখি দেখা হবে। তবে সেই সাক্ষাতে এখনও বহু দেরি।

আপাতত প্রতি দিন ১০ ফুট করে গভীরে প্রবেশ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

রোজ ১০ ফুট পাহাড় কাটা মুখের কথা নয়। সাড়ে চার কোটি বছরের পুরনো পাথরকে টলাতে হবে। কাজটা যেমন কঠিন, তেমনই জীবনের ঝুঁকিও আছে প্রতি মুহূর্তে।

রোজ ১০ ফুট পাহাড় কাটা মুখের কথা নয়। সাড়ে চার কোটি বছরের পুরনো পাথরকে টলাতে হবে। কাজটা যেমন কঠিন, তেমনই জীবনের ঝুঁকিও আছে প্রতি মুহূর্তে।

জোজি-লা টানেলের এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছিল এক সংবাদ সংস্থা। তিনি জানিয়েছেন, প্রতি দিনই ডিনামাইট দিয়ে পাথর ফাটানো হয়। এতে বিপদ কতটা, তা সতর্কতার ব্যবস্থা দেখলেই মালুম হয়।

ডিনামাইট ফাটানোর সময় শ্রমিকদের চলে যেতে হয় টানেল থেকে অন্তত ৭০০-৮০০ মিটার দূরে। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স, ছোটখাটো চিকিৎসা করার একটি ভ্যানও।

তবে এতে চিকিৎসা সম্ভব না হলে বিপদ এড়ানো মুশকিল। কারণ এই এলাকা থেকে হাসপাতাল অন্তত ২৪ কিমি দূরে।

রাস্তা খারাপ হওয়ায় সেই হাসপাতালে সহজে পৌঁছনো সম্ভব নয়। ঝুঁকি আছে জেনেই এখানে কাজ করতে এসেছেন হাজারখানেক শ্রমিক।

তাদের জন্য তৈরি বসতিতে রয়েছে সরকার পরিচালিত কমিউনিটি কিচেন। সেখানে বিনামূল্যে চার বেলা খাবার খান শ্রমিকেরা। ভাত-রুটি-ডাল-সব্জির পাশাপাশি নান-পরোটা-পুরী-ছোলের মতো মুখরোচক খাবারও রান্না হয় শ্রমিকদের জন্য।

জোজি-লা টানেলের ওই শ্রমিক জানিয়েছেন, পরিবার ছেড়ে এখানে থাকেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে বাড়ির কথা মনে পড়ে না তা নয়। কিন্তু এখন কাজ শেষ করাটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছে।

দিনে ১২ ঘণ্টার কাজ, পাথর খাদানের অমানবিক শ্রম, জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তাই প্রতি দিন ১০ ফুট করে পাথর খুঁড়ে চলেন তাঁরা।

ঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দিলে তাঁরা বলেন, ‘‘এখান থেকে কবে ফিরতে পারব বা আদৌ ফিরতে পারব কি না জানি না। আর সত্যি বলতে এখন আর এ নিয়ে ভাবিও না। এখন শুধু একটাই লক্ষ্য, কাজ সম্পূর্ণ করা।’’

জোজি-লা টানেল তৈরি হলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। যে লাদাখ থেকে জম্মু-কাশ্মীরে আসতে এখন সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে, সুড়ঙ্গ তৈরি হলে তা কমে আসবে মাত্র ২০ মিনিটে।

এখন যে পথে এই যাতায়াত হয়, তা ঠান্ডায় বরফ জমে বন্ধ থাকে বছরের অনেকটা সময়। আবার কখনও সেখানে নামে ধস। যেমন এই মুহূর্তে গত ছ’মাস টানা বন্ধ রয়েছে রাস্তাটি।

জোজি-লা টানেলে অবশ্য সারা বছর যে কোনও সময়ে যাতায়াত করতে পারবে যানবাহন। তাতে ভারতের আরও একটি সুবিধা হবে।

লাদাখের সীমানা নিয়ে চিন এবং ভারত দু’পক্ষই সমাধানসূত্র খুঁজে পেতে আপাতত ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও সময় সীমান্তে আবার সংঘর্ষ বাধার ঝুঁকি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জোজি-লা টানেল তৈরি হলে অল্প সময়েই সেনাবাহিনীকে পৌঁছে দেওয়া যাবে লাদাখ সীমান্তের কাছাকাছি।

ততটাই সহজ হবে তাদের কাছে জোগান পৌঁছে দেওয়ার কাজও। এ ছাড়া পরিবহণ সহজ হলে তার প্রভাব পড়বে কাশ্মীর এবং লাদাখের অর্থনীতিতে। প্রভাব পড়বে পর্যটনেও।

তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও হিমালয়ের বুকে এই সুড়ঙ্গপথ তৈরির জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তার সবটুকু করছে ভারত সরকার। সীমান্তে মোট ৩১টি সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। তার মধ্যে একটি এই জোজি-লা টানেল। সব ক’টি সুড়ঙ্গের মধ্যে দীর্ঘতম হতে চলেছে এই সুড়ঙ্গপথটিই।

জোজি-লা টানেলে থাকবে বিবিধ আধুনিক ব্যবস্থা। অস্ট্রিয়ায় ব্যবহৃত সুড়ঙ্গ খননের আধুনিক প্রক্রিয়া যা ‘নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং মেথড’ নামে পরিচিত, তার সাহায্যেই তৈরি করা হবে এই সুড়ঙ্গ। ভিতরে থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, সর্ব ক্ষণের বিদ্যুৎ সংযোগ, বেতার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, এবং বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ৫৭৫ ফুট উঁচুতে তৈরি হচ্ছে এই সুড়ঙ্গ। যার কাজ প্রায় অর্ধেক শেষের পথে। সব ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে শেষ হবে এই সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ। তবে তার আগে এখনও বহু পরীক্ষা দেওয়া বাকি।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]