জনযুদ্ধে ভাঙনের মুখে মায়ানমার, পালাচ্ছে সেনারা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 15-11-2023

জনযুদ্ধে ভাঙনের মুখে মায়ানমার, পালাচ্ছে সেনারা

মায়ানমারে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে সে দেশের সেনা সরকার। দেশের প্রায় ছয়টি প্রদেশ এখন বিদ্রোহীদের দখলে। তারা সমান্তরাল প্রশাসন চালু করেছে। প্রদেশগুলির কোনও কোনও এলাকায় সেনারা আত্মসমর্পণ করেছে অথবা পালিয়েছে। বেশ কিছু সেনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সীমান্তের কাছ থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী আশ্রয়প্রার্থী মায়ানমার সেনার ৩৯জন জওয়ানকে উদ্ধার করে। 

তবে ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে মায়ানমার থেকে আসা শরণার্থী স্রোত। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত যা ছিল হাজার দুই, অন্ধকার নামার আগেই তা পাঁচ হাজার ছাপিয়ে যায়। বেশিরভাগ শরণার্থীই মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা অধিকাংশ চিন জনগোষ্ঠীর অংশ। যাদের সঙ্গে মিজো এবং মণিপুরের কুকি জনগোষ্ঠীর জাতিগত যোগ আছে। সেই কারণে মিজোরাম সরকার শরণার্থীদের প্রতি মানবিক অবস্থান নিয়েছে। শরণার্থী স্রোত আছড়ে পড়তে পারে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশেও। ভারতের ওই তিন রাজ্যের সঙ্গেও মায়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। 

বিদ্রোহীদের একটি সেনা বাহিনী। অভিবাদন গ্রহণ করছেন কমান্ডার।

তবে এই পর্বে লড়াই মূলত হচ্ছে চিন সীমান্তে। চিনের সঙ্গে মায়ানমারের বাণিজ্যের মূল সড়ক বিদ্রোহীদের দখল। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২১-এ সু চি’র দেশে নতুন করে সেনা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর সামরিক সরকার এবারের মতো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। ছয়দিন ধরে লাগাতার হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। বহু সেনা নিহত হয়েছে। কয়েক শো জওয়ানকে বন্দি করেছে বিদ্রোহী জনযোদ্ধারা। মুখোমুখি লড়াইয়ে একাধিক অফিসার নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির বিমান বাহিনী এখন প্রধান ভরসা। তারা লাগাতার বোমা বর্ষণ করে চলেছে। 

একাধিক সূত্রের খবর, এবারের ‘বিদ্রোহের এপিসেন্টার’ শান প্রদেশে সরকারি বাহিনী প্যালেস্তাইনের উপর ইজরায়েলের বোমা বর্ষণের মতো আকাশ থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। তবে শান প্রদেশ বিদ্রোহীদের দখলেই আছে। 

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট মিন সোয়ে সামরিক প্রশাসক তথা প্রধানমন্ত্রী মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। নানা সূত্রের খবর, চলতি বিদ্রোহের জেরে প্রেসিডেন্ট এবং সামরিক শাসকের মধ্যেও মতবিরোধ সামনে আসছে। দেশ ভেঙে যেতে পারে, নিজের এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন মিন সোয়ে। তাতে বেজায় ক্ষিপ্ত সামরিক সরকার। 

২০২১-এ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী সু চি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি-কে ক্ষমতাচ্যূত করে ফের দেশটির শাসনভার নিজেদের হাতে নেয় সেনা। সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইং অভিযোগ করেন, সু চি সরকার ভোটে কারচুপি করে ক্ষমতায় এসেছে। সেই থেকে সু চি জেলবন্দি। তাঁর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ছয়টি দুর্নীতির মামলায় ৬০ বছরের বেশি কারাবাসের রায় হয়েছে। আরও মামলা বিচারাধীন। সামরিক প্রশাসকই মিন সোয়েকে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসায়। 

নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ আনা হলেও আসল কারণ ছিল সু চি দেশটির বিদ্রোহী জনগোষ্ঠী কারেন, কাচিন, কারেন্নি এবং শিনদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছিলেন। তাতেই বেঁকে বসে সেনা। সেই থেকে দেশের নানা প্রান্তে সেনার সঙ্গে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সামরিক বাহিনীর লড়াই চলছিল। ২০১৬-তে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে অভিযান চালিয়ে মায়ানমার সেনা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করে। সেই রাখাইন প্রদেশ বর্তমানে আরাকান লিবারেশন আর্মি নামে রোহিঙ্গা বিপ্লবীদের সেনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। মায়ানমারের সরকারি বাহিনী আরাকান বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছে না। রাখাইন প্রদেশও কার্যত বিদ্রোদীদেরই দখলে। 

সম্প্রতি শুরু হওয়া জনযুদ্ধের কারণ অবশ্য ভিন্ন। দেশটির একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী এতদিন শুধু আলাদা লড়াই চালাচ্ছিল তাই নয়, তারা নিজেদের মধ্যেও এলাকা দখলে ব্যস্ত থাকত। বিগত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় তারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গঠন করে। এই ব্যাপারে ওই দেশে কাজ করা একাধিক এনজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে বলে খবর। পিডিএফ-ই চলতি যুদ্ধ চালাচ্ছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]