মূত্রনালীতে সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) সব সময়ই অতর্কিতে হানা দেয়। সংক্রমণের পর তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে বা চিকিত্সা না করালে এই রোগ একাধিক বার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। অনেকে ইউটিআই-তে আক্রান্ত হলে চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়াই বাজারচলতি কিছু ওষুধ ও জেল ব্যবহার করতে শুরু করেন।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা অত্যন্ত খারাপ। বরং এতে সংক্রমণ কমে না, তার বদলে তা অনেক সময় শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। ওষুধ বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যেই প্রবল ভাবে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রথম থেকেই এই অসুখের সময় বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে।
প্রস্রাবের সংক্রমণ-জনিত জ্বর হলে সে ক্ষেত্রে সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা থাকে না। শীত করে, প্রস্রাব করার সময়ে ব্যথা ও জ্বালা অনুভূত হয়, তলপেটে ব্যথা করে, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হয়, প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হতে পারে। শরীর দুর্বল লাগে, খেতে ভাল লাগে না, বমি হয় বা বমি বমি ভাব থাকে। এই ধরনের লক্ষণ দেখলে রুটিন ইউরিন টেস্ট ছাড়া ইউরিন কালচার এবং দরকার হলে আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান, এক্স রে করতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিত্সকের পরামর্শ মেনেই ওষুধ খান। এ ছাড়া কিছু ঘরোয়া প্রতিকারেও মিলতে পারে উপশম।
ইউটিআই-এর কয়েকটি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার-
পরিমিত পানি খান: ইউরিন ইনফেকশন হলে কিংবা ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা থাকলে শরীরে যাতে পানির ঘাটতি না হয়, সে বিষয় নজর রাখুন। প্রস্রাবে হলুদ ভাব দেখা গেলেই দেরি না করে দিনে অন্তত আড়াই লিটার পানি খাওয়া শুরু করা উচিত। সাধারণত প্রতি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া উচিত। প্রস্রাব হতে এর চাইতে বেশি দেরি হলে পানির পরিমাণ আরও বাড়াতে হতে পারে। খুব বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখবেন না, এতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি রাখুন: ইউটিআই হলে অনেক চিকিত্সক বেশি পরিমাণে ভিটামিন-সি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন সি প্রস্রাবের সময় জ্বালা ভাব কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে খাদ্যতালিকায় মুসাম্বি, কমলালেবু, কিউয়ি, ব্রকোলি, পেঁপে, স্ট্রবেরি অবশ্যই রাখুন।
আনারস খেতে পারেন: আনারসে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপকারী উত্সেচক। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ইউটিআই-এ আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন আনারসের রসও খাওয়া যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্র্যানবেরির রসও এই সমস্যা সমধানে বেশ উপকারী।
প্রোবায়োটিক জাতীয় খাদ্য খান: এই সময় প্রোবায়োটিক জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। এই প্রকার খাদ্য ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। দই প্রোবায়োটিকের ভাল উত্স। দই খেলেও উপকার পেতে পারেন।
বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন: মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে তা কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই দ্রুত এর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেকিং সোডা দ্রুত মূত্রনালীতে সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আধ চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস জলে ভাল করে মিশিয়ে দিনে এক বার করে খেলেই প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা ভাব কমে যেতে পারে। তবে বেশি মাত্রায় বেকিং সোডা শরীরের ক্ষতি করতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
রাজশাহীর সময় / এএইচ