পিরীতি কাঁঠালের আঠা হতেই পারে, কিন্তু, পিরীতে যদি পীড়িত হয়ে যান, তাহলে সেই পীড়া যন্ত্রণা দিতে পারে একেবারে মৃত্যু পর্যন্ত। ভালোবাসায় দোষ নেই বটে, কিন্তু, আচমকা রাস্তাঘাটে নিজের ক্রাশকে দেখলে দু-একটা হৃদকম্প যে মিস-ও হয়ে যায়, সেকথা সারা বিশ্বের মানুষের জীবনেই উপলব্ধ। কিন্তু, এ তো গেল শুধু মজার কথা।
একটি সাম্প্রতিক বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা বলছে, সত্যি সিত্যই আপনি রাস্তাঘাটে বা অফিসে, পাড়ায়, ফ্ল্যাটের ছাদে অথবা ট্রামে- বাসে যদি কোনও সুন্দরী মহিলাকে দেখেন, তাহলে আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও খুব-একটা কম নয়।
সম্প্রতি স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৮৪ জন পুরুষকে নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। যেখানে, ৮৪ জনকেই সুডোকু পাজ়ল সমাধান করতে দেওয়া হয়েছিল। যিনি পাজ়ল সমাধান করবেন, তাঁর সঙ্গে একই ঘরে রাখা হয়েছিল দুজন অপরিচিত মানুষকে। ওই দুজনের মধ্যে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা। যখন অপরিচিত মহিলাটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তখন অতি সহজেই কোনওরকম মানসিক বাধা ছাড়া পাজ়ল সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু, যখন অপরিচিত পুরুষটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং একজন অপরিচিত সুন্দরী মহিলার সঙ্গে তিনি ঘরের ভেতর রইলেন, তখন পাজ়ল সমাধান হতে বেশ সমস্যা হল এমনকি বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়াও দেখা গেল।
আমাদের শরীরে কর্টিসোল নামে একপ্রকার বিশেষ হরমোন থাকে, যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে বা স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয়। গবেষণা বলছে যে, যখন পুরুষরা কোনও অচেনা সুন্দরী মহিলাকে দেখেন, তখন এই কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, মহিলাকে দেখার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে এই কাণ্ড ঘটতে পারে। তখন পুরুষদের হৃদকম্প এত বেড়ে যায় যে, মাঝ আকাশে বিমান থেকে লাফ দেওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।
গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই শারীরিক ক্রিয়া একেবারে সৃষ্টির আদি সময় থেকেই বিবর্তিত হয়েছে। একেবারে গুহাবাসী থাকার সময় থেকে, পুরুষদের শরীরে কর্টিসোল প্রতিক্রিয়া ওইভাবেই তৈরি হয়েছে যে, যখনই তাঁরা কোনও অচেনা সুন্দরী মহিলাকে দেখেন, তখনই হরমোন শরীরকে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত করে। পরবর্তী সময়ে পুরুষরা এই বিষয়টি নিয়েও উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেছিলেন যে, বর্তমানে তাঁর কোনও সঙ্গী আছে কিনা, বর্তমানে তিনি যৌন সংসর্গ না করার জন্য কোথাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন কিনা। এই চিন্তাভাবনাগুলোই হৃদকম্পনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে।
স্বাভাবিকভাবেই যে কোনও সুন্দরী মহিলাকে দেখলে হৃদকম্পন আচমকা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে। টরন্টো-ভিত্তিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আয়ারভিন ওলকফ বলেছেন যে, কম মাত্রায় কর্টিসোল বা অ্যান্ড্রেনালিন অনুভব করার ক্ষেত্রে কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু, যদি উচ্চ স্তরে এরকম হতেই থাকে, তাহলে চাপ খুব অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। অ্যাড্রেনালিন উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি আর্টারি ডিজিজ ইত্যাদি দিতে পারে। কর্টিসোল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। কোনও মানুষের যদি দীর্ঘ সময় ধরে কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ উচ্চ মাত্রায় বজায় থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে শরীরে সংক্রমণ হবে, এমনকি সেটা ম্যালিগন্যান্ট হয়ে মারণ আকারও ধারণ করতে পারে।