কর্মসংস্থান হবে ৩০ হাজার মানুষের:ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা


Online Desk , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2023

কর্মসংস্থান হবে ৩০ হাজার মানুষের:ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ১২ নভেম্বর। নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় নবনির্মিত ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’ নামক এই কারখানাটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারখানায় বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে সারের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাবে এ সার কারখানা। সার কারখানার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কারখানাটি চালু হলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, আগামী ১২ নভেম্বর নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এ কারখানায় বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ কারখানা তৈরিতে বিশ্বের অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই শেষ হয়েছে এর নির্মাণ কাজ। ফলে উদ্বোধনের জন্যও পুরোপুরি প্রস্তুত কারখানাটি। একইসঙ্গে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন শুরু করেছে কারখানাটি।
এ বিষয়ে জিপিইউএফপি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) এ এস এম মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বের ভালো ভালো জায়গা যেমন ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপান থেকে যন্ত্রপাতি এনে এখানে স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপন শেষে ইনডিভিজুয়াল মেকানিক্যাল টেস্টে আমরা গিয়েছি। মেকানিক্যাল টেস্টে সফল হয়ে ধীরে ধীরে প্রডাকশনে গিয়েছি এবং সফল হয়েছি।’
এছাড়া ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক বলেন, ‘ঘোড়াশাল পলাশ সার কারখানা বাংলাদেশের প্রথম ইউরিয়া সার কারখানা। এখানে পরিবেশ দূষণকারী সব পদার্থকে ক্যাপচার ও ট্রিট করা হবে। আগে আমরা ফ্লোগ্যাস আকাশে ছেড়ে দিতাম। এখন আমরা সেটাকে উড়তে দেব না। ফ্লোগ্যাসে প্রধান উপাদান কার্বন ডাইঅক্সাইড ধরে সেটাকে পুনরায় প্রসেস করে উৎপাদন বাড়াব।’
এতে করে প্রতিদিন ২৮০ মেট্রিক টন সার অতিরিক্ত উৎপাদন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি বাংলাদেশে প্রথম, এজন্য আমরা এটিকে গ্রিন ফার্টিলাইজার বলি। দূষিত কোনো পদার্থ আমরা বাইরে যেতে দেব না।’
২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার উদ্যোগ নেয় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন, শক্তি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের। এরপর ২০২০ সালের ১০ মার্চ ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার দায়িত্ব পায় সিসি সেভেন নামে একটি চীনা এবং জাপানের মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই এর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়। এখন পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন করছে কারখানাটি।
শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, এটি চালু হলে শিল্পখাতে এক নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। দেশের বাইরে থেকে সার আমদানি হ্রাস পাবে ফলে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, দেশে কম-বেশি প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন সারের চাহিদা রয়েছে। গ্যাসসহ অন্য সংকট কাটিয়ে ঘোড়াশাল-পলাশ, যমুনা, শাহজালাল, আশুগঞ্জসহ অন্য কারখানায় যথাযথ উৎপাদন করা গেলে খুব বেশি সার আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করতে হবে প্রতি বছর।
দুই মাস আগে কারখানাটি চালু হওয়ায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত সার উৎপাদন হবে। ১১০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা। এখান থেকে বছরে উৎপাদন হবে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার। প্রতিদিন ২ হাজার আটশ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর সার কারখানাটি।
দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে বার্ষিক ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং ১৯৮৫ সালে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন যথাক্রমে ঘোড়াশাল এবং পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপিত হয়। কারখানা দুটি পুরাতন হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস এবং ডাউন টাইম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানা দুটির স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, শক্তিসাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের নির্দেশনা দেন। সে প্রেক্ষিতে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন গ্রানুলার ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালে প্রল্পটির কাজ শুরু করে শিল্প মন্ত্রণালয়।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]