নওগাঁয় শীতের আগেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 03-11-2023

নওগাঁয় শীতের আগেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁয় এ বছর আগেভাগেই শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আকস্মিক আবহাওয়া পরিবর্তনে শীতের আগেই ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে সব বয়সী মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

হঠাৎ করেই শিশু রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় জনবল, শয্যা ও ওষুধ সংকটে বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, ১০০ শয্যা সদর হাসপাতাল হিসেবে সেবা প্রদানের দীর্ঘ ২২ বছর পর ২০১৯ সালে নতুন ১৫০ শয্যার ৮ তলা বহুতল ভবন পেয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয় নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই হাসপাতালটির ২৫০ শয্যায় সেবা কার্যক্রম চালুর প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালে নতুন ভবনটি রোগীদের সেবায় পুরোপুরি ব্যবহার শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে নতুন ভবন চালুর পরই পুরাতন ভবনটির ১০০ শয্যার কক্ষগুলো মেডিকেল কলেজের প্রয়োজন হওয়ায় সেটি তাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। বর্তমানে নতুন ভবনের ১৫০ শয্যায় দৈনিক গড়ে ২৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে এবং ১৫০ জন নতুন রোগী দৈনিক ভর্তি হচ্ছেন। 

তবে ২৫০ শয্যার অনুমোদনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় জনবল, ওষুধ ও খাবারের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। ২৫০ শয্যা হিসেবে এই হাসপাতালে ৬৭ জন চিকিৎসক ও ২ শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৩০ জন চিকিৎসক ও ৮২ জন নার্স। এতে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকেই নওগাঁর ১১টি উপজেলাসহ নওগাঁ শহর সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট ও বগুড়ার কয়েকটি উপজেলা থেকে সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে। যেখানে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই প্রায় অর্ধেক। হাসপাতালে দৈনিক ভর্তি রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। যারা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এসব শিশুদের মাঝে জ্বর, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ডায়রিয়া, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানান রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যার তুলনায় প্রতিনিয়ত ভর্তি রোগী থাকছে অন্তত ছয় গুণ বেশি। বাড়তি এসব রোগীদের শয্যা না থাকায় মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সরা।

শিশু ওয়ার্ডে সেবা প্রত্যাশী নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বামনসাতা গ্রাম থেকে আসা রমজান আলী বলেন, পাঁচ মাস বয়সী সন্তান শাফি হঠাৎ করেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ঘনঘন শ্বাসকষ্ট শুরু হলে এখানে এনে ভর্তি করি। কিন্তু ভর্তির দুই দিনেও মেঝে ছাড়া বেডে ঠাঁই হয়নি। সরকারি হাসপাতালে এনেছিলাম যাতে কম খরচে চিকিৎসা করাতে পারি। কিন্তু এখানে আসার পর অক্সিজেন ছাড়া প্রায় সবকিছুই বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতালের খাবারও পাচ্ছি না।

নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর গ্রাম থেকে আসা আরেক সেবা প্রত্যাশী তাসলিমা খাতুন একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, তিন মাস বয়সী মেয়ে এক সপ্তাহ যাবত জ্বরে ভুগছে। ওষুধ খাইয়েও জ্বর পুরোপুরি ভালো হচ্ছিল না। এখানে এনে ভর্তি করানোর ১ দিন পেরিয়ে গেলেও বেড পাইনি। মেঝেতে রোগীর চাপ থাকায় জরুরি মুহূর্তে নার্সদের ডেকেও কাছে পাওয়া যায় না। অনেক সময় বাচ্চাকে নিয়ে লিফট বেয়ে নেমে নিচ তলায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে দেখাতে যেতে হয়। ওয়ার্ডে নার্সদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখলে দুর্ভোগ কমতো।

হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার সুফিয়া খাতুন বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৩৪৬ জন রোগী শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। পরের মাস অক্টোবরে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৯১৩ জন। হঠাৎ করেই শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১ মাসের ব্যবধানে ওই ওয়ার্ডে শিশু ভর্তির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ১২ শয্যার বিপরীতে বর্তমানেও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৮১ জন। এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে অন্তত ২৭ জন নার্সের প্রয়োজন। অথচ মাত্র ৯ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স দিয়ে ওই ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিতে হয়। এবার শীতের অনেক আগেই সবকটি ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফরিদ হোসেন বলেন, শৈত্য প্রবাহের আগে দৈনিক ৬০-৬৫ জন রোগী ভর্তি থাকতো। এখন তা প্রায় ৮০ জন ছাড়িয়েছে। ধুলাবালিতে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এখনকার শিশুরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগ থেকে নিরাপদে রাখতে শিশুদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ পান করানোসহ পিপিআই টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে এখন কিছু ফ্লু ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। খরচ করার সাধ্য থাকলে ওই ভ্যাকসিন দিতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিশুর স্বজনরা যদি নিয়মিত হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধৌত করেন তাহলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু আনছার আলী বলেন, এ বছর শীত শুরুর অনেক আগেই ঠান্ডাজনিত রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। ওইসব রোগীদের ভর্তির চাপই এখন বেশি। রোগীদের চাপ সামাল দিতে এখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের বরাবরই কিছুটা বেগ পেতে হয়। কারণ এই হাসপাতাল শুধুমাত্র নামেই ২৫০ শয্যা। ১০০ শয্যার পরিপূর্ণ লোকবলও নেই। বাস্তবতায় ২৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, ওষুধ ও খাবারের প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় প্রতিনিয়তই রোগীদের পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। দ্রুত প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজটি স্থানান্তর হলে হাসপাতালের সেবার মান বাড়বে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]