বায়ুদূষণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 02-11-2023

বায়ুদূষণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়

বিশ্বের অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের এখন অন্যতম বড় বাধা হলো পরিবেশ দূষণ। সম্প্রতি ভারতের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণে বাড়তে পারে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণে বাড়তে পারে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যাতে আয়ুষ্কাল প্রায় দশ বছর কমে যায়। এই গবেষণাটি ৭ বছর ধরে ভারতের দিল্লি এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাইতে ১২ হাজার বাসিন্দার ওপর করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বায়ুতে মিশে থাকা ২.৫ আকারের পার্টিকেল রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
  
২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে দিল্লির বায়ুতে ২ দশমিক ৫ মাত্রার পার্টিকেল মিশে থাকায় শহরটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তাই এই শহরের বাসিন্দাদের রয়েছে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি। দূষিত বাতাসে শ্বাস নিলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
যখন ২.৫ মাত্রার পার্টিকেল (একটি চুলের থেকে প্রায় ৩০ গুণ পাতলা) যুক্ত বায়ুতে শ্বাস নিলে এই পার্টিকেল রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে। যা ফুসফুস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
 
এই গবেষণাটি ২০১০ সালে শুরু হওয়া ভারতে দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ে চলমান গবেষণার একটি অংশ। আর এই গবেষণাটি প্রথম বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সংযোগের দিকটিতে নজর দেয়া হয়। গবেষণার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে অন্যতম দিল্লি এবং চেন্নাইয়ের বায়ুকে বেছে নেয়া হয়।
 
দিল্লির বায়ুতে বার্ষিক গড়ে ২ দশমিক ৫ মাত্রার বা ৮২–১০০ মাইক্রোগ্রাম পার্টিকেল এবং চেন্নাইয়ের বায়ুতে ৩০-৪০ মাইক্রোগ্রাম পার্টিকেল মিশে থাকে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে অনেক গুণ বেশি।
 
ভারতে তুলনামূলকভাবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগসহ অনেক অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেশি। চলতি বছরের জুনে মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, ভারতে জনসংখ্যার ১১.৪ শতাংশ বা ১০ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর ১৩ কোটির বেশি মানুষ প্রাক-ডায়াবেটিক অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ডায়াবেটিসের গড় প্রকোপ ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
 
এছাড়াও ল্যানসেটের গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের গ্রামের তুলনায় শহরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি। ভারতে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব আগের অনুমানের চেয়ে বেশি।
 
আরও এক মেডিকেল গবেষণায় দেখা গেছে, এক মাস ২ দশমিক ৫ মাত্রার পার্টিকেলযুক্ত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। আর এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে এই বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি বার্ষিক গড়ে ২ দশমিক ৫ মাত্রার স্তরের প্রতি ১০ মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধির জন্য ২২ শতাংশ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়েছে।
 
দিল্লির সেন্টার ফর ক্রনিক ডিজিজ কন্ট্রোলের গবেষক সিদ্ধার্থ মন্ডল বলেন, ‘ভারতীয়দের প্যাথোফিজিওলজির কারণে পশ্চিমা জনসংখ্যার তুলনায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। গত ২০ থেকে ৩০ বছরে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে বায়ুদূষণ বেড়েছে। আর এই পরিবেশগত কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে গিয়েছে।
 
তিনি বলেন, ‘এর আগে ভারতের গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষদের ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেশি এর জন্য শুধু মানুষের খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা এবং শারীরিক ব্যায়ামসহ কিছু কারণকে দায়ী করা হতো। তবে এখন এই গবেষণা আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে।’
 
বায়ুতে মিশে থাকা ২ দশমিক ৫ মাত্রার পার্টিকেলে সালফেট, নাইট্রেট, ভারী ধাতু এবং কালো কার্বন থাকে। এটি রক্তনালীর আস্তরণের ক্ষতি করতে পারে যা ধমনীকে শক্ত করে রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়াও এর মাধ্যমে সরাসরি হার্টের পেশীতে আক্রমণ শুরু করে এবং ইনসুলিন উৎপাদনের পাশাপাশি এর প্রভাবকে বাধা দেয়। গবেষকরা এখন পরিবেশ দূষণ শরীরে কোলেস্টেরল এবং ভিটামিন ডি মাত্রার ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলে তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
 
তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, দূষণ কমলে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য অসংক্রামক রোগের পরিমাণ হ্রাস হতে পারে।
 
২০১৬ সালে বায়ুদূষণ নিয়ে জনসাধরণের তীব্র প্রতিবাদের পর ভারতের কেন্দ্রীয় ও দিল্লি সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারমধ্যে ছিল পুরানো ডিজেলচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ, শহরকে বাইপাস করে হাইওয়ে নির্মাণ এবং ফসল পোড়ানো নিষিদ্ধ। এরপর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বায়ুতে মিশে থাকা ২ দশমিক ৫ মাত্রার পার্টিকেল ২২ শতাংশ কমে গেছে। এই হ্রাসের পরিমাণ স্বল্প হলেও আশাব্যঞ্জক।

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]