রাশিয়ার দাগেস্তানের মাখাচকালা বিমানবন্দরে দাঙ্গার ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, দাগেস্তানের বিমানবন্দরে যে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর হাত রয়েছে। তারাই বিমানবন্দরে ইহুদিবিরোধী দাঙ্গা উসকে দিয়েছে।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ফিলিস্তিনের গাজায় উপত্যকায় গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচার বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদসহ ২০ হাজারেরও বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
ইসরাইলের এই বর্বর আগ্রাসনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্ব। দেশে দেশে গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে মানুষ। এর মধ্যেই রোববার (২৯ অক্টোবর) রাশিয়ার মুসলিম প্রধান অঞ্চল দাগেস্তানের মাখাচকালা বিমানবন্দরে ঘটে অনাকাঙিক্ষত ঘটনাটি।
মূলত বিমানবন্দরটিতে ইসরাইল থেকে একটি বিমান আসছে এমন গুজবে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা জোর করে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন। কেউ কেউ রানওয়েতে দৌড়াদৌড়ি করেন। এ সময় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও তাদের সংঘর্ষ হয়। এ কারণে বিমানবন্দর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় ৮০ জনকে আটক করেছে। এছাড়া এ নিয়ে একটি তদন্তও শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে নিন্দা জানিয়েছেন দাগেস্তানের মুসলিম নেতারা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও।
‘ইহুদিবিরোধী দাঙ্গায় পশ্চিমাদের হাত আছে’
সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে যোগ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত বিশেষ করে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও দাগেস্তান বিমানবন্দরের ইহুদিবিরোধী দাঙ্গা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
পুতিন বলেন, ‘গতকাল (রোববার) মাখাচকালা বিমানবন্দরের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এটা করা হয়েছে ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এজেন্টারা এটা ঘটিয়েছে।’ তবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত ঘিরে যাতে দাঙ্গা ও সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও সতর্ক করেন তিনি।
আরটির প্রতিবেদন মতে, রোববার বিমানবন্দরের দাঙ্গাটি 'উট্রো দাগেস্তান' (দাগেস্তান মর্নিং) নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে সমন্বয় করা হয়েছিল, যে চ্যানেলটি পরে ডিলিট করে দেয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, চ্যানেলটি সাবেক রুশ রাজনীতিবিদ ইলিয়া পোনোমারেভের সঙ্গে সম্পৃক্ত যিনি এখন ইউক্রেনে থাকেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রকাশ্যে কিয়েভকে সমর্থন করেন।
পোনোমারেভ অতীতেও দাগেস্তানে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু এখন দাবি করছেন যে তিনি গত বছর থেকে চ্যানেলটিকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের জন্য বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে ‘বিরামহীন বিশৃঙ্খলা’ চায়। অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘কারা ভয়াবহ এসব বিশৃঙ্খলা ঘটাচ্ছে আর এর থেকে কারা লাভবান হচ্ছে, আমার মতে, এটা এরই মধ্যে সবার কাছে স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররাই বিশ্বের এই অস্থিতিশীলতার প্রধান সুবিধাভোগী।’
তবে পুতিনের এসব অভিযোগে ‘হাস্যকর’ বলে নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার হোয়াইট হাউজে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমি ইউক্রেনকে দোষারোপ করার বিষয়ে তাদের (রাশিয়ার) মন্তব্য দেখেছি। তাদের এই অভিযোগ অযৌক্তিক।’