তিন সপ্তাহ আগে রাজশাহীসহ সারাদেশে কয়েকদিন টানা বৃষ্টিপাত হয়। সেসময় বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ কমে যায়। সেই অস্থিরতা এখনো কাটেনি বরং উল্টো সংকট যেন দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। সবজি, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে।
শনিবার (২১ অক্টোবর) রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার, শালবাগান বাজার, কেদুরমোড় বৌবাজার, তালাইমারী বৌবাজার, সাগরপাড়া কাঁচা বাজার, কোর্ট কাঁচা বাজার ও বিনোদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এখনো কোনো পণ্যের দাম কমেনি। বরং একটু একটু করে বেড়েই চলেছে। খুচরা বাজারে কেজিতে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি। অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে ৮০ বা তার চেয়ে বেশি দামে।
অন্যদিকে, চাষের মাছে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। আর দেশি মাছগুলোর দাম যেন আকাশছোঁয়া, বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশীতে।
বেশ কয়েক মাস হলো ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। শেষ এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পেঁয়াজ। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি যার দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। আর আমদানি করা ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজারদরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
বিনোদপুর বাজারে আসা এক দিনমজুর হাবিবুর রহমান বলেন, “দামের চোটে আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। আগে মাছ-মাংস খেতে না পারলেও শাকসবজি খেয়ে বেঁচে থাকতাম। এই ভাবে আমরা গরিব মানুষ দিন দিন জিন্দা লাশ হয়ে যাচ্ছি। রাজশাহীতে এত এত উন্নয়ন দিয়ে আমরা কি করব, যখন সপ্তাহে একদিনও পরিবারে মুখে মাংস তুলে দিতে না পারি! বড় বড় স্যারদের বলবেন উন্নয়ন উন্নয়ন করে যেন দাম আরেকটু বাড়িয়ে দেয়”
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে ক্ষেতে সবজি পচে নষ্ট হয়েছে, তাই সরবরাহ বিঘœ হওয়ায় দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে গোল বেগুন ৬০-৮০ টাকা এবং লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুরলতি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা, আর ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙা, চিচিঙা ৬০-১০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। কম দামের মধ্যে মূলা, পেঁপে কেজিতে ৩৫-৫০ টাকা।
দর বাড়তি মাছ-মাংসেরও। শনিবারে কেজিতে গরু ও খাসির মাংস ৫০ টাকা বাড়তি। প্রতি কেজি গরু ৭৫০-৮০০ টাকা ও খাসি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা মতো বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগী কেজিতে ৩২০-৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কম আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনেন পাঙাশ, সিলভার কার্প ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। বাজারে এসব মাছের কেজি এখন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। যা কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন মাছ বিক্রেতারা।
সাহেব বাজারের মাছ বিক্রেতা মোঃ সাগর বলেন, এমনিতেই কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের দাম বেশি ছিল। এর মধ্যে ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম বেড়েছে।