কৃষি খাতে বড় বিনিয়োগ চাইল বাংলাদেশ


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 20-10-2023

কৃষি খাতে বড় বিনিয়োগ চাইল বাংলাদেশ

গত দেড় দশকে বাংলাদেশের কৃষি খাত এগিয়েছে বহু দূর। বেড়েছে উৎপাদন, কৃষির আধুনিকায়ণে নেয়া হয়েছে নানা কার্যক্রম। দেশের কৃষি খাতে গত জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা (৪.৪ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা (৩.২ বিলিয়ন ডলার), বাকিটা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও ইফাদ পার্টনার প্রকল্পে ৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তারপরও এই মুহূর্তে কৃষি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

গত মঙ্গলবার থেকে ইতালির রোমে শুরু হওয়া জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বিশ্ব খাদ্য ফোরামের ‘বিনিয়োগ সম্মেলন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও পরবর্তী সেশনে বাংলাদেশে কৃষি খাতের অর্জন ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন মন্ত্রী। বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে উন্নত দেশ, আন্তর্জাতিক ব্যাংক, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কৃষিখাতের রূপান্তরে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করছে এফএও। সেজন্য, এফএও ১৭-২০ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে। চার দিনব্যাপী বিশ্ব খাদ্য ফোরামের ‘বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল শুক্রবার। এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যাদের কৃষি খাতে বিদেশী বিনিয়োগের বড় প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, আরব ব্যাংক, আন্তঃআমেরিকান উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ল্যাটিন আমেরিকা উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানে এফএওর মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু, চিফ ইকোনমিস্ট টরেরো কুলেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো: বখতিয়ার, রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: মনিরুল ইসলাম, ইকনোমিক কাউন্সিলর মো: আল আমিন এতে অংশ নিয়েছেন।

কৃষিমন্ত্রী কৃষি খাতে বিনিয়োগ উপস্থাপনবিষয়ক বাংলাদেশের নির্ধারিত সেশনে দেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি ব্যবহার এই ছয়টি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এসব খাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের অবকাঠামো ও সরকারি সুযোগসুবিধার বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। বাংলাদেশে কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য কৃষি খাত খুবই সম্ভাবনাময় এবং তা লাভজনক হবে। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ, আম, কাঁঠাল, আনারস ও টমেটো- এসব পণ্যের জন্য কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে দ্রুত বিনিয়োগ কামনা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজ, আম ও টমেটোসহ শাকসবজি সংরক্ষণের এখনো তেমন প্রযুক্তি নেই, কোল্ড স্টোরেজ নেই। এ ছাড়া এসব পণ্য সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে ২৫-৪০% নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য, দ্রুত ২০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১১০০টি মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন।

সম্মেলনে কৃষি খাতে বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরা হয় বিশ্ব দরবারে। বিশ্বব্যাপী, চাল, সবজি, পেঁয়াজ, কাঁঠাল ও পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়। একইভাবে চা, আলু ও আম উৎপাদনে শীর্ষ সাতে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্মেলনে বিশ্বনেতারা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিশেষ করে উপকূল, লবণাক্ততার কারণে অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়।

এফএও বাংলাদেশের কৃষি খাতে সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণ করবে : জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশের কৃষি খাতে সহযোগিতা আরো বাড়াবে ও বিনিয়োগ বাড়াতেও কাজ করবে। রোমে এফএওর সদর দফতরে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপির সাথে বৈঠকে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু (ছঁ উড়হমুঁ) এ কথা জানান।
কৃষিমন্ত্রী এফএওর মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এফএও বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের জন্য বিদেশী ও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এফএও সহযোগিতা করতে পারে। আগামীতে, এফএওর সাথে সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]