ইসলাম এতিম, অসহায়, বা দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করতে, তাদের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করে। কোরআনে আল্লাহ বার বার এতিম শিশুদের সাহায্য করতে, আশ্রয় দিতে, স্নেহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ যদি এতিম বা অসহায় কোনো শিশুকে আশ্রয় দেন, পালিত ছেলে বা মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন, তা নিঃসন্দেহে অপরিসীম সওয়াবের কাজ। কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী কারো পিতা মাতার পরিচয় বদলানো বৈধ নয়। পালিত হিসেবে নেওয়ার পর শিশুর আইডেন্টিটি বদলে প্রকৃত বাবা মায়ের পরিচয় গোপন করে শিশুটিকে নিজেদের সন্তান হিসেবে পরিচিত করা যাবে না। তাকে তাদের পালিত সন্তান হিসেবে পরিচিত করতে হবে।
পালিত হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে শিশু যেমন পালক বাবা-মায়ের প্রকৃত সন্তান হয় না, তাদের মাহরামও হয় না। শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ছেলে হলে পালক মা, মেয়ে হলে পালক বাবার সাথে তাকে শরঈ পর্দা মেনে চলতে হবে।
তবে কোনো শিশুকে যদি দুবছর পূর্ণ হওয়ার আগেই পালিত হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তাহলে স্তন্যদানের মাধ্যমে তাকে মাহরাম বানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন পালিত হিসেবে গ্রহণকৃত শিশুটি যদি মেয়ে হয়, তাহলে পালক বাবার আপন কোনো বোনের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মেয়েটি তার দুধ ভাগ্নী অথবা আপন কোনো ভাইয়ের স্ত্রীর দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে তার দুধ ভাতিজী হিসেবে তার মাহরাম হতে পারে। শিশুটি যদি ছেলে হয়, তাহলে পালক পায়ের আপন বোন বা ভাইয়ের স্ত্রীর দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে একইভাবে তার ভাগ্নী বা ভাতিজী হিসেবে মাহরাম হতে পারে।
রাসুল (সা.) বলেছেন,
يحرم من الرضاع ما يحرم من النسب
রক্তসম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম হয়, দুধের সম্পর্কের কারণেও তারা মাহরাম হয়। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
কারা মাহরাম বা কাদেরকে বিয়ে করা হারাম, তার বর্ণনা এসেছে কোরআনের এ আয়াতে,
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাদের, তোমাদের মেয়েদের, তোমাদের বোনদের, তোমাদের ফুফুদের, তোমাদের খালাদের, ভাতিজীদের, ভাগ্নীদের, তোমাদের সেসব মাদের যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদের, তোমাদের শ্বাশুড়ীদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদের, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের ওপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নিসা: ২৩)