সুরা আল আ’লা পবিত্র কোরআনের ৮৭তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ১৯টি, রুকু ১টি। এ সুরার ১-১৩ আায়াতে আল্লাহ মানুষকে তার নামের তাসবিহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নিজের কিছু সৃষ্টি ও কুদরতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু জানেন। যারা আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের জন্য দ্বীন পালন করা সহজ করে দেন। সৌভাগ্যবানরা আল্লাহর প্রেরিত উপদেশবাণী গ্রহণ করে আর যারা দুর্ভাগা তারা আল্লাহর বাণী উপেক্ষা করে জাহান্নামের শাস্তির উপযুক্ত হয়।
সুরা আ’লার ১-১৩ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
(১)
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
সাব্বিহিস-মা রাব্বিকাল-আ’লা
তুমি তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো,
(২)
الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ
আল্লাযি খালাকা ফাসাওয়া
যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।
(৩)
وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ
ওয়াল্লাযি কাদ্দারা ফাহাদা
যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেছেন, তারপর পথ দেখিয়ে দিয়েছেন,
(৪)
وَالَّذِي أَخْرَجَ الْمَرْعَى
ওয়াল্লাজি আখরাজাল-মারআ
এবং যিনি তৃণাদি উত্পন্ন করেছেন।
(৫)
فَجَعَلَهُ غُثَاءً أَحْوَى
ফাজাআলাহু গুসাআন আহওয়া
পরে একে ধূসর আবর্জনায় পরিণত করেছেন।
(৬)
سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسَى
সানুকরিউকা ফালা তানসা
নিশ্চয় আমি তোমাকে পাঠ করাব, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না,
(৭)
إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ إِنَّهُ يَعْلَمُ الْجَهْرَ وَمَا يَخْفَى
ইল্লা মা শাআল্লাহ ইন্নাহু য়া’লামুল-জাহরা ওয়া মা য়াখফা
তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। নিশ্চয়ই তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন সব বিষয়।
(৮)
وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرَى
ওয়া নুয়াসসিরুকা লিল-য়ুসরা
আর আমি তোমাকে সরল পথের জন্য সহজ করে দেব।
(৯)
فَذَكِّرْ إِنْ نَفَعَتِ الذِّكْرَى
ফাযাক্কির ইন নাফাআতিয-যিকরা
অতএব তুমি উপদেশ দাও যদি উপদেশ ফলপ্রসূ হয়।
(১০)
سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَخْشَى
সায়াযযাক্কারু মান য়াখশা
যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহণ করবে।
(১১)
وَيَتَجَنَّبُهَا الْأَشْقَى
ওয়া য়াতাজান্নাবুহাল-আশকা
আর তা উপেক্ষা করবে যে নিতান্ত হতভাগা।
(১২)
الَّذِي يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرَى
আল্লাযি য়াসলান-নারাল-কুবরা
যে প্রবেশ করবে মহাঅগ্নিতে।
(১৩)
ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَى
সুম্মা লা য়ামুতু ফীহা ওয়ালা য়াহয়া
তারপর সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা, তার গুণকীর্তন করা আমাদের কর্তব্য। নামাজে ও নামাজের বাইরে যতো বেশি সম্ভব আল্লাহর পবিত্র নামের তাসবিহ ও জিকির করা উচিত।
২. আল্লাহর বহু বিস্ময়কর সৃষ্টি ও নিদর্শন আমাদের ঘিরে রেখেছে। এগুলো দেখে করে স্রষ্টার অস্তিত্ব ও তার ক্ষমতার বিশালতা অনুভব করা এবং স্রষ্টার পরিচয় অনুসন্ধান করা ও তার আনুগত্য করা আমাদের কর্তব্য।
৩. আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন সব কিছু জানেন। তাই প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা উচিত, তাকে ভয় করা উচিত।
৪. আল্লাহ মুমিনদের জন্য দ্বীন পালন সহজ করে দেন। তিনি দ্বীনকে সহজ রাখতে চান। তাই নিজের ওপর অতি কাঠিন্য চাপিয়ে না নিয়ে দ্বীন পালন করা উচিত সহজভাবে।
৫. যারা আল্লাহর উপদেশবাণী গ্রহণ করে, আল্লাহর বাণী পড়ে ও শুনে নিজেদের সংশোধন করে, তারা সৌভাগ্যবান। দুনিয়া ও আখেরাতে তারা সাফল্য ও সৌভাগ্যের অধিকারী।
৬. যারা আল্লাহর বাণী উপেক্ষা করে, তারা দুর্ভাগা। তারা চিরকাল জাহন্নামের শাস্তি ভোগ করবে।