গাজা সীমান্তে রক্তচক্ষু নিয়ে অপেক্ষায় লাখ লাখ ইজরায়েলি সেনা। সময় শেষ পালানোর। আর কিছুক্ষণেই শুরু হবে ভয়ঙ্কর বোমাবর্ষণ। উত্তর ও দক্ষিণ গাজা ছেড়ে ইতিমধ্যেই পালাচ্ছেন অন্তত ১০ লাখ বাসিন্দা। ভিটেমাটি ছেড়ে, রক্তাক্ত, বিকলাঙ্গ শিশুদের আঁকড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়োচ্ছেন ভিটেমাটিহারারা। সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে আসছে শয়ে শয়ে যুদ্ধট্য়াঙ্ক। ইজরায়েলের পদাতিক বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে চারদিকে।
শ্মশানের স্তব্ধতা নেমে এসেছে গাজা। আকাশে বাতাসে যুদ্ধবিমানের সাইরেনের শব্দ আর বারুদের গন্ধ। পচাগলা মৃতদেহের গন্ধে বাতাস ভারী। তার মধ্যেই চলছে নির্মম হত্যালীলা।
শুক্রবারই গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিল ইজরায়েল যে বাঁচতে গেলে ছাড়তে হবে ঘর-বাড়ি। ২২ লক্ষ গাজাবাসীর অর্ধেককেই গাজার দক্ষিণাংশে সরে যেতে বলা হয়েছিল। এরপর রবিবার আরও কঠোর নির্দেশ দেয় ইজরায়েলি সেনা। মাত্র ৩ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে দক্ষিণ গাজা থেকেও বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। তারপরই স্থলপথে গাজায় অভিযান চালানোর তোড়জোড় শুরু করে ইজরায়েল।
কিন্তু, কোথায় পালাবেন গাজাবাসী? উত্তর এবং পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে ইজরায়েলি সেনার যুদ্ধট্যাঙ্ক। আকাশে চক্কর কাটছে বোমারু বিমান। সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি নেই। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক ইজরায়েলি বাহিনী, কামান, সাজোঁয়া গাড়ি। নির্দেশ এলেই স্থলপথে হামলা চালাতে তৈরি তারা। দক্ষিণ দিকে রাফাহ সীমান্তও বন্ধ করে রেখেছে মিশর। পূর্বের ভূমধ্যসাগরেও ইজরায়েলি সেনার কড়া নজরদারি।
ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্প্রতি গাজার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে জানিয়েছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিট নামে রাস্তা দিয়ে দক্ষিণে পালিয়ে যেতে পারে উত্তর গাজার বাসিন্দারা। গাজা ভূখণ্ডের ঠিক মাঝখান দিয়ে যাওয়া, এই রাস্তাটিকে তারা ‘পাথ টু সেফটি’, অর্থাৎ নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার পথ বলে জানিয়েছে। তবে মাত্র ঘণ্টা তিনেকই সেই পথ নিরাপদ থাকবে। তারপরে সেখানেই শুরু হবে বোমাবর্ষণ। সোমবার দেখা যায় ঠিক তাই হচ্ছে। সেই ‘নিরাপদ পথ’ দিয়ে হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয় বাসিন্দা পালানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে সেখানেই হচ্ছে বিস্ফোরণ।
যুদ্ধে এখনও অবধি প্রায় আড়াই হাজার গাজাবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। গাজায় জল-বিদ্যুৎ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে ইজরায়েল। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফের হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, হামাসের “গোপন ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। হামাসের অস্তিত্বই মুছে দেব পৃথিবী থেকে।”