নওগাঁর জবই বিলের দুই পাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখো মানুষের ঢল নামে। থেমে থেমে হর্ষধ্বনিতে মুখরিত নদীপারের চারপাশ। বইঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর মাঝি-মাল্লাদের কণ্ঠে কোরাস শোনা যায় ‘হেইও রে, হেইও’। আর এভাবেই একেকটি নৌকা ছুটে চললে হর্ষধ্বনি দিয়ে দলগুলোকে উৎসাহিত করতে থাকেন দর্শকরা। এ সময় পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।
এভাবেই বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতা। বাইচ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আল মামুন।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ এই নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। এতে অংশ নেন প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলার ৬ ইউনিয়নের পক্ষে নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশেপাশের ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮টি নৌকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই নৌকাবাইচ উপভোগ করতে দুপুরের পর থেকেই তিব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে জবই বিলের উৎসুক মানুষ জড়ো হতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় জবই বিলের মাহিল প্রান্ত থেকে নৌকাবাইচ শুরু হয়ে মাছ চত্বর এলাকায় শেষ হয়। নৌকাবাইচের দূরত্ব ছিল প্রায় ১ কিলোমিটার। এ সময় বিলের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার দুই পাশে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তাদের আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত বিলের চারপাশ।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা সত্তরোর্ধ শুকবর আলী বলেন, বাইচ দেখতি আমি দুপুর ২টায় মধ্য এখানে আইছি। বাইচ দেইখে খুব আনন্দ পাইছি।
স্থানীয় রহিমা খাতুন নামে এক নারী বলেন, আমার জীবনে প্রথম নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। এখানে এসে নৌকা বাইচ দেখে দারুণ আনন্দ পেয়েছি। প্রতি বছর এমন আয়োজন করার আহ্বান জানান তিনি।
নওগাঁ থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে নৌকা বাইচ উৎসবের কথা জানতে পেরেছি। সকাল ১১টায় রওনা হয়ে এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ এখন বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, জবই বিল কেন্দ্রীক পর্যটন বিকাশে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিনিয়ত বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই একটি অংশ জবই বিলে নৌকা বাইচ। এই প্রতিযোগীতা আয়োজন করায় আবহমান বাংলার চিরায়ত চিত্র ধরে রাখার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে জবই বিল আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এতে স্থানীয়দের জীবন জিবীকায় পরিবর্তন আসবে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি ধরে রাখতে ও জবই বিলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যর অংশ এই নৌকা বাইচ।
তিনি বলেন, নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের মাঝে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। আগামীতেও আরও বড় পরিসরে এই ধরনের আয়োজন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
এসময় সাপাহার উপজেলা পরিষদ চেরোম্যান শাহজাহান হোসেন মন্ডল, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শামসুল আলম শাহ্ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মসুদ রেজা সারোওয়ার, জেলা পলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান, জেলা আওয়ামীলীগের নেতা সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক ও আব্দুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান আলী লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী শাহু্ চৌধুরী (বাবু) প্রকৌশলী তৃণা মজুমদার, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী, উপজেলার ছয় ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব, ইউপি সদস্যগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।