একে একে চালু হচ্ছে মেগাপ্রকল্প


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-10-2023

একে একে চালু হচ্ছে মেগাপ্রকল্প

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো একের পর এক দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, উন্নয়নে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। গত বছর চালু হওয়া পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলেরও উদ্বোধন হয়ে গেছে গত মঙ্গলবার। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেল এখন মতিঝিল পর্যন্ত চালুর অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে উন্মোচিত হয়েছে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ ও শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। শিগগিরই উদ্বোধন হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। এ ছাড়া আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ, খুলনা-মোংলা রেলপথসহ আরও বেশকিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন হতে চলেছে শিগগিরই।

আগামী মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনে সাধারণত আইনি বাধা থাকে। তাই এর আগেই দেশের বড় বড় সব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন সরকারপ্রধান। উদ্বোধনের পাশাপাশি আয়োজন করা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের জনসভাও। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনকালে অবশ্য জনসভা হয়নি। প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে হয়নি।

১০ অক্টোবর উদ্বোধন হয়ে গেল পদ্মা রেলসেতু দেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতু। পানিপ্রবাহের দিক থেকে আমাজনের পর পদ্মাই বিশ্বে বৃহত্তম। নানা বাধা ডিঙিয়ে নির্মিত হয় স্বপ্নের এ সেতুটি। ২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সেতুটির, পরদিন থেকেই শুরু হয় যান চলাচল। গত সোমবার পদ্মা রেলসেতুরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। গড়ে ওঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার পথ এখন চার ঘণ্টায় নেমেছে। অন্তত ১৯ জেলার মানুষ সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছে পদ্মা সেতুর বদৌলতে। কুয়াকাটা, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যটকরাও যেতে পারছেন অনায়াসে। কেবল নৌপথ নয়, আকাশপথের যাত্রীরাও এখন সড়কপথ বেছে নিচ্ছেন এ সেতুর কারণে। ট্রেন চালু হওয়ায় রেলপথও হয়ে ওঠবে যাত্রীপ্রিয়। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের পর ঢাকা-মোংলার সরাসরি রেল যোগযোগ স্থাপিত হবে।

পদ্মা সেতুতে কন্টেইনারবাহী মালগাড়ি চলতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মোংলাতেও ঢাকা থেকে সরাসরি রপ্তানি পণ্য পাঠানো যাবে। ভারতের সঙ্গে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল হবে।

১৯৯৮ সালে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর এতে রেললাইন যুক্ত করা হয়। সেতুর এক পাশে রয়েছে সিঙ্গেল লাইনের রেলপথ। যমুনার অভিজ্ঞতা থেকে প™§ায় দ্বিতল সেতু নির্মাণ করে সরকার, নিচতলায় ট্রেন ও উপরতলায় গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রেখে।

৭ অক্টোবর থার্ড টার্মিনাল

পদ্মা রেলসেতু উদ্বোধনের ঠিক তিন দিন আগে ৭ অক্টোবর দেশের প্রথম ও বৃহত্তম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহজালালে ভবিষ্যতে যাত্রী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন রানওয়ে করার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।

তিনতলাবিশিষ্ট তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এ টার্মিনালের যাত্রীধারণ সক্ষমতা বছরে ১ কোটি ৬০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনালের কার পার্কিংয়ে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখা যাবে। উড়োজাহাজের পার্কিং বে থাকছে ৩৭টি। আগমনী যাত্রীদের জন্য লাগেজ বেল্ট থাকবে ১৬টি। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য ১ হাজার ৩০০ বগর্মিটার আয়তনের একটি কাস্টম হল থাকবে। সেখানে ছয়টি চ্যানেল থাকবে। চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি, এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ১৫টি। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে ১২৮টি। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন কাউন্টার ১৫টি। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৬৬টি। আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৫৯টি। ভিভিআইপি ৩টি। বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে প্রথম পর্যায়ে ১২টি। পরবর্তী সময়ে আরেকটি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত করা হবে। বর্তমান টার্মিনাল দুটির সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের কোনো সংযোগ থাকবে না। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে করিডোর নির্মাণ করা হবে।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিন ৩০টির বেশি বিমান সংস্থার ১২০-১৩০টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব বিমানের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল (টার্মিনাল ১ ও ২) ব্যবহার করেন। বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। নির্মাণ করা হয়েছে তৃতীয় টার্মিনাল। এতে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব।

২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার স্থপতি রোহানি বাহারিন। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। শাহজালাল বিমানবন্দর নিয়ে বর্তমানে বিদেশিদের যে ধারণা, তা আমূল পাল্টে যাবে থার্ড টার্মিনালে অবতরণের পর। শাহজালাল বিমানবন্দরের সেবার মান নিয়ে যেসব অভিযোগ আাছে, সেগুলো মুছে যাবে থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালুর পর। ২০২৪ সালে টার্মিনালটি সম্পূর্ণ অপারেশনে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, থার্ড টার্মিনাল যাত্রীদের ধারণা পাল্টে দেবে। কারণ এখানে থাকছে সুন্দর বোর্ডিং ব্রিজ, দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশনে যাতায়াতের এস্কেলেটর, আর ষড়ঋতুর ছয়টি রঙের সমাহার। সেভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে এ বিমানবন্দর।

নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেইট থাকবে। এতে করে যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি না হয়ে সরাসরি নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সেরে ফেলতে পারবেন। তবে কেউ যদি না চায়, সেক্ষেত্রে ৫৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারও থাকবে। সেখানে ইমিগ্রেশন করবে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

এ বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য তৈরি হয়েছে ২৪ হাজার বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্যান্য) এবং ২২ হাজার বর্গমিটার র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ), ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার সোল্ডার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার ও ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস)।

২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

দেশের প্রথম দ্রুতগতির উড়ালপথ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হলো গত ২ সেপ্টেম্বর। এর মধ্য দিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। পরদিন সকাল ছয়টা থেকে সাধারণ যানবাহন উড়ালসড়কে চলাচল করতে পারছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক। পুরো উড়ালসড়কে ৩১টি স্থান দিয়ে যানবাহন ওঠানামা (র‌্যাম্প) করার ব্যবস্থা থাকছে। র‌্যাম্পসহ উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উড়ালসড়কে ১১টি টোল প্লাজা থাকছে। পুরো পথ চালু হলে তা যানবাহনে পাড়ি দিতে ২০ মিনিট লাগবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাওলা থেকে তেজগাঁও অংশ পাড়ি দিতে লাগে ১২ মিনিট।

১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সম্ভাব্য উদ্বোধন

সরকারের আরেকটি ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ। আগামী ১২ নভেম্বর রেলপথটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথটি দুটি ভাগে কাজ করছে ঠিকাদার। দোহাজারী থেকে চকরিয়া অংশের কাজ করছে সিআরইসি এবং তমা কনস্ট্রাকশন। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত হয়। ২০১০ এর জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ঢাকা থেকে দিনে দুটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে- একটি ট্রেন সকাল সোয়া আটটায় ঢাকার কমলাপুর থেকে যাত্রা করে দুপুর সোয়া দুইটায় কক্সবাজারে পৌঁছাবে। ওই ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে রাত সাড়ে সাতটায় যাত্রা করে কমলাপুর পৌঁছাবে ভোর তিনটা ৪০ মিনিটে। আরেকটি ট্রেন কমলাপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে সকাল সাড়ে ছয়টায় পৌঁছাবে কক্সবাজারে। সেখান থেকে দুপুর ১২টায় ফিরতি যাত্রা করে কমলাপুরে ফিরবে রাত আটটায়।

সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এটি ট্রেন চলাচল শুরু করার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কিনা? এমন প্রশ্নে রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, বন্যায় ক্ষতি যা হয়েছিল তার মেরামত (সংস্কার) হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রেলপথটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

২৯ অক্টোবর মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল রুটের উদ্বোধন

দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন এমআরটি-৬ এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ২৯ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকেই যাত্রী চলাচল শুরু হয় দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেনে।

এখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালুর অপেক্ষায় আছে ঢাকাবাসী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর যাত্রী পরিবহন শুরু হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝল অংশের। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন যেভাবে ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হয়েছিল, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। এই অংশে মেট্রোরেলের সাতটি স্টেশন হল বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, সচিবালয় ও মতিঝিল।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ উদ্বোধনের পর শুরুতে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে ট্রেনগুলো যাত্রাবিরতি দেবে। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ট্রেন চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এই সময়ে উত্তরা থেকে সরাসরি মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।

তিনি জানান, সবকটি স্টেশন চালু হয়ে গেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। মতিঝিল-কমলাপুর অংশ ২০২৫ সালের মধ্যে চালুর কথা রয়েছে।

এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণব্যয়: ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। স্টেশনগুলো হচ্ছে-দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা সাউথ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। এমআরটি-৬ লাইনে চলবে ২৪টি ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে রয়েছে ছয়টি করে কোচ বা বগি। ভবিষ্যতে আরও দুটি করে বগি সংযোগ করা যাবে। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার চলতে সক্ষম। তবে চলবে ১০০ কিলোমিটার গতিতে। তবে পথের বাঁকে কমবে গতি। প্রতিটি ট্রেন একসঙ্গে দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর ১০০ টাকা।

২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল

আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে গিয়ে এ টানেল উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইদিনে সেখানে জনসভায় অংশ নিতে পারেন তিনি। কর্ণফুলীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ফ্লাইওভার থাকবে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা হয়। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

১৯ অক্টোবর ১৫০টি সেতু ১৪টি ওভারপাস

আগামী ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবন থেকে ১৫০ সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধনের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। পরে জানা যায় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারছেন না। তাই তিন দিন এগিয়ে আগামী ১৯ অক্টোবর সেতু ও ওভারপাস উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী।

৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেললাইন

আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেললাইনের উদ্বোধন হতে পারে। প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছিল। সে সময় প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়াই পঞ্চম ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। সর্বশেষ মেয়াদ বেড়ে খুলনা-মংলা রেললাইনের কাজ শেষ করার মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তবে নির্মাণকাজ শেষ করার মেয়াদ হলো চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পর্যন্ত। বাকি এক বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ডিফেক্ট লায়াবেলিটি পিরিয়ড হিসেবে ধরা আছে।

যে কোনো সময় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে একমত হয় উভয় দেশ। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রকল্প। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময় পেলে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে উদ্বোধন হবে এ রেলপথটি।

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। এরপর প্রকল্প সংশোধনে সময় বাড়ে ২০২২ সালের জুন নাগাদ। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মোট প্রকল্পব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় অনুদান ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]