সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে অবাধে মদ, গাঁজা, হেরেুইন, ইয়াবা, অস্ত্র, কয়লা, পাথর, কাঠ, গরু ও ঘোড়াসহ বিড়ি পাচাঁর করেছে। এসবের বিনিময়ে মাছ, ভৈজ্যতেল, ছোলা, ঢাল, মটর, সবজি ও হাস-মরগি ভারতে পাচাঁর করছে। র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে মদের চালানসহ ৩ চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারী) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃরা হলো- জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি গ্রামের সুলতান মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (৩২) ও একই উপজেলার ঝুমগাঁও গ্রামের ঈমান আলী (৩০)।
পুলিশ , র্যাব ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসেবে পরিচিত দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ে র্যাব অভিযান চালিয়ে ৪০২ বোতল ভারতীয় মদসহ সুলতান মিয়া ও দুলাল মিয়াকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে ঝুমগাঁও গ্রাম থেকে ৮০ বোতল মদসহ ঈমান আলীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানের সময় আলম মিয়া নামের এক মাদক ব্যবসায়ী সুকৌশলে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মৌয়াছড়া, গুচ্ছগ্রাম, রাজাপাড়া, গামাইতলা, মাছিমপুর, ধনপুরসহ আরো একাধিক পয়েন্ট দিয়ে দেশি পন্য ছোলা, মটর, সবজি ভারতে পাচাঁর করছে চোরাকারবারীরা। এর বিনিময়ে ভারত থেকে মদ, গাঁজা, হেরুইন ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার নিষিদ্ধ মালামাল আনা হচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারী জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন এসব চোরাচালানের বিষয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন- সন্ধ্যার পর থেকে পিকআক ভ্যান ভর্তি করে দেশীয় পন্য ওপেন ভারতে পাঁচার করে মাদকদ্রব্য আনা হচ্ছে। কিন্তু চোরাকারবারীদেরকে কখনোই গ্রেফতার করা হয়না। এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের নজরদারী বৃদ্ধি করার জন্য জোরদাবী জানান।
অন্যদিকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী, পুরান লাউড়, চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, রাজাই, কড়ইগড়া, নয়াছড়া, গারোঘাট, টেকেরঘাট সীমান্তের রজনীলাইন, বুরুঙ্গাছড়া, নীলাদ্রি, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জংগলবাড়ি, বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের রংগাছড়া, লামাকাটাসহ আরো বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাকারবারীদের সর্দার ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, খোকন মিয়া, আনোয়ার মিয়া, বাবুল মিয়া, ইসাক মিয়া, কামাল মিয়া, আবু বক্কর, রফিকুল ইসলাম, শহিদ মিয়া, জজ মিয়া ও লেংড়া জামালগং সিন্ডিকেডের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন কয়লা, পাথর, মদ, গাঁজা, হেরুইন, ইয়াবা, বিড়ি, গরু, ঘোড়া ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। তাদের মধ্যে ইয়াবা কালাম, খোকন মিয়া, রমজান মিয়ার বিরুদ্ধে মদ ও কয়লা পাচাঁর মামলা হয়েছে। তারপরও থেমে নেই চোরাকারবারীরা। তাদের রয়েছে দুইজন গডফাদার। তারা সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে দীর্ঘদিন যাবত চাঁদাবাজি করে হয়েগেছে কোটিপতি। তবে বেশ কিছু দিন আগে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লা, নৌকা ও মাদকদ্রব্যসহ ২০-২২জন চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর পর সীমান্ত চোরাচালান কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত এই অভিযান বন্ধ থাকার কারণে আবারো চোরাচালান বেড়েগেছে। একই ভাবে নবগঠিত উপজেলা মধ্যনগর, সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতক উপজেলা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্যসহ গরু, চাল ও অস্ত্র পাচাঁর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই দেলোয়ার হোসেন, র্যাব ৯এর মিডিয়া ম্যানেজার এএসপি সোমেন মজুমদার ও দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর সাংবাদিকদের জানান, পৃথক অভিযানে ভারতীয় মদের চালানসহ গ্রেফতারকৃত ৩ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সনের বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত চোরাকারবারীরা এসব অবৈধ কাজ করছে। তাই এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।