তিব্বতের শিশাপাংমা পর্বতে তুষারধস। যার জেরে প্রাণ গেল এক মার্কিন এবং এক নেপালি পর্বতারোহীর। নিখোঁজ আরও দুই অভিযাত্রী। শনিবার (৭ অক্টোবর), শিশপাংমা শৃঙ্গ আরোহনের চেষ্টা করতে গিয়ে এই ধসের কবলে পড়েন প্রায় ৫০ জন পর্বতারোহী। শিশপাংমা শৃঙ্গের উচ্চতা ৮,০০০ মিটারের বেশি। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির তালিকায় এর স্থান ১৪তম।
এমনিতে, আট-হাজারি পর্বতশৃঙ্গগুলির মধ্যে শিশপাংমা আরোহন করা তুলনায় সহজ বলে গণ্য করা হয়। তবে, শনিবারের পরিস্থিতি ছিল আলাদা। ৭,৬০০ মিটার এবং ৮,০০০ মিটার উচ্চতায় পরপর দু-দুটি তুষারধস নামে। যার জেরে প্রাণ গিয়েছে, মার্কিন পর্বতারোহী আনা গুটু এবং নেপালি গাইড মিংমার শেরপার। এছাড়া, খোঁজ নেই আরেক মার্কিন পর্বতারোহী জিনা মারি রজুসিডলো এবং তাঁর নেপালি গাইড তেনজেন শেরপার।
পর্হবতারোহনের জগতে তেনজেন শেরপা এক বড় নাম। গত জুলাই মাসে নরওয়ের ক্রিস্টিন হরিলার গাইড হিসেবে তিনি পাকিস্তানের কে২ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ করেন। এর ফলে, আটহাজারি ১৪টি শৃঙ্গের সবকটিই জয় করেছিলেন তেনজেন। শুধু তাই নয়, ১৪টি আটহাজারি শৃঙ্গ জয়ে তিনিই ছিলেন বিশ্বের দ্রুততম পর্বতারোহী। অর্থাত্, সবথেকে কম সময়ে তিনি এই ১৪টি শৃঙ্গ জয় করেন। সেই তেনজেনেরই এখনও কোনও খোঁজ নেই। এর পাশাপাশি, শনিবার শিশপাংমা শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও এক নেপালি গাইড, কারমা গেলজেন শেরপা। তবে, উদ্ধারকারীরা তাঁকে পাহাড়ের ঠাল থেকে উদ্ধার করে নীচে নামিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
বর্ষায় তুষারধসের প্রবল সম্ভাবনা থাকে বলে, গত কয়েক মাস শিশাপাংমায় আরোহণ স্থগিত ছিল। তবে, অক্টোবরে বৃষ্টি কম হয় বলে, সাধারণত তুষার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে। তাই অক্টোবর মাস পড়তেই, পর্বতারোহীরা শৃঙ্গ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। শনিবার, ধস নামার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রোমানিয়া, আলবেনিয়া, ইতালি, জাপান এবং পাকিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশের মোট ৫২জন শৃঙ্গের উদ্দেশে যাত্রা করছিলেন। সকলেই ধসের কবলে পড়েন। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন দুই পাকিস্তানি পর্বতারোহী। খারাপ আবহাওয়ার কারণে শৃঙ্গ জয়ের কয়েকশ’ মিটার দূর থেকেই তাঁদের নীচে নেমে আসতে হয়। সিরবাজ খান নামে এক পাক পর্বতারোহীর সামনে আবার অন্য এক রেকর্ডের হাতছানিও ছিল। শিশপাংমা জয় করতে পারলেই তিনি প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে আটহাজারি ১৪টি পর্বত চূড়া জয় করার রেকর্ড গড়তেন। তবে, রেকর্ডের হাতছানি এড়াতে পেরেছেন বলেই, প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।
এমনিতে অক্টোবর মাসকে পর্বতারোহনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আগেকার সব হিসেব বদলে যাচ্ছে। অক্টোবরেও হিমালয়-সহ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে তুষারধসের ঝুঁকি বাড়ছে। গত সপ্তাহেই, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিমাপের জন্য, নেপাল-তিব্বত সীমান্ত এলাকায়, ৮,২০১ মিটার উচ্চতায় চো ওয়ুতে একটি আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করেছে চিন।