আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, বান্দার সব দোয়াই কবুল হয় যদি না সে কোনো অন্যায় অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের জন্য দোয়া করে এবং তাড়াহুড়া করে। এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, দোয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করার মানে কী? রাসুল (সা.) বললেন, সে বলতে থাকে, আমি তো দোয়া করেছি, আমি তো দোয়া করেছি, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হচ্ছে না! এভাবে হাহুতাশ করে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দোয়া করা ছেড়ে দেয়। (সহিহ মুসলিম)
এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই
১. দোয়া আল্লাহর প্রিয় আমল। নবি (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়ার মতো প্রিয় আর কিছু নেই। (মুসনাদে আহমদ) কারণ দোয়ায় বান্দার দাসত্ব, বিনয়, অহংকারহীনতা ও আল্লাহর কাছে তার মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ পায়। আল্লাহ বলেন,
وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ
তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা শীঘ্রই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সুরা গাফির: ৬০)
যে অহংকার করে আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত থাকে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাকে লাঞ্চিত ও অপদস্থ করে জাহান্নামে ঢোকাবেন। নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, দোয়াই ইবাদত। (মুসনাদে আহমদ)
২. মুসলমানের দোয়া কখনও বিফলে যায় না। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, মুসলমান যদি এমন কোনো দোয়া করে যেখানে অন্যায় বা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের দাবি নেই, তাহলে সেই দোয়ার কারণে আল্লাহ তাকে যে কোনো একটি প্রতিদান অবশ্যই দেন; হয়তো সে যা চেয়েছে দ্রুতই তাকে তা দিয়ে দেন, তার প্রতিদান আখেরাতের জন্য রেখে দেন, অথবা তার থেকে কোনো বিপদ বা মসিবত দূর করে দেন। সাহাবিরা বললেন, যদি আমরা অনেক বেশি দোয়া করি? নবিজি (সা.) উত্তর দিলেন, আল্লাহ বেশি দান করবেন। (মুসনাদে আহমদ)
৩. ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এ হাদিস থেকে বোঝা যায় দোয়ার আদব হলো চাইতে থাকা, নিরাশ না হওয়া। এতে আনুগত্য, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর কাছে বান্দার মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ পায়। পূর্ববর্তী আলেমদের অনেকে বলেছেন, আমি দোয়া কবুল না হওয়ার চেয়ে দোয়া থেকে বঞ্চিত হওয়াকে বেশি ভয় করি। (ফাতহুল বারি)